বিজয় দিবসেই মেট্রোরেলের স্বপ্ন পূরণের আশা

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার বিভিন্ন প্রকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে মেট্রোরেলের প্রথম চালানের কোচ এখন ঢাকায়। ঢাকা মাস-ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোর পাশে ভিজিটর সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে মেট্রোরেল। 

বিজয় দিবসেই মেট্রোরেলের স্বপ্ন পূরণের আশা
ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার বিভিন্ন প্রকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে মেট্রোরেলের প্রথম চালানের কোচ এখন ঢাকায়। ঢাকা মাস-ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোর পাশে ভিজিটর সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে মেট্রোরেল। 

স্বপ্নের মেট্রোরেল নিয়ে রাজধানীসহ দেশবাসীর আগ্রহ ও প্রশ্নের কমতি নেই। কেমন হবে মেট্রোরেল, কি উপকার পাবো, কতোটুক নিরাপদ? মেট্রোরেলের বগিগুলোর কেমন হবে? ইত্যাদি। উত্তরগুলো বেশ সহজ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখেই চালু হবে মেট্রোরেল। যে পাশে স্টেশন থাকবে সে পাশের দরজাই খুলবে। যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিটি দরজায় একাধিক সেন্সর থাকবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী বা হুইলচেয়ারে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য স্থান নির্ধারিত থাকবে। প্রায় দুই হাজার যাত্রী একসঙ্গে প্রতিটি ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে। সে অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।

সরেজেমিনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের কঠোর লকডাউনের মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেট্রোরেল রুট-৬-এর নির্মাণ শ্রমিকেরা। করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকরা বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তাসামগ্রী পরিধানের পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করে কাজ করতে দেখা গেছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে। সে অনুযায়ী শ্রমিকরা দিনরাত শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন মেট্রোরেলের কাজ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের মধ্যে মেট্রোরেল চালু করার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সর্বশেষ ২০১৯ সালের মে মাসে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানানো হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপনের সময় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। গত ৩ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই শেষ হবে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি জানিয়েছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেলের প্রথম ধাপ চলতি বছরের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিএমটিসিএল এর সর্বশেষ তথ্যমতে, মেট্রোরেল প্রকল্পের (এমআরটি লাইন-৬) নির্মাণকাজের বর্তমান বাস্তব অগ্রগতি প্রায় ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম ভাগ উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সূত্র আরো জানায়, ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে ডিপোর ভিতরে ১৬ দশমিক ৯০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া ভায়াডাক্টের উপরে ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক প্লেট কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে। রোড কাম রেল ভেহিক্যাল ব্যবহার করে ডিপোর অভ্যন্তরে এবং ভায়াডাক্টের উপরে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ডিপোর ভিতরে ৬ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম স্থাপন হয়ে গেছে।

ডিএমটিসিএল-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ। উত্তরার উত্তর স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। উত্তরা উত্তর ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে স্টিল স্ট্রাকচার ইরেকশন কাজ চলমান। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণকাজও চলমান। এ ছাড়া উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিবেচনায় পাঁচটি লং স্প্যান ব্যালান্স ক্যান্টিলিভারের মধ্যে তিনটির কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

ঢাকার যানজট নিরসনসহ নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে এই মেট্রোরেল প্রকল্পের মাধ্যমে সব কটি পয়েন্টে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন টিম নয় সারা দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে প্রকল্পটির উদ্বোধন নিয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্বল্প সময়ে উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছানো যাবে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে স্টেশন থাকবে ১৬টি। প্রতি চার মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। এই রেলপথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।  মেট্রোরেল ব্যবস্থায় প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২৪টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি বগি।

১৬টি স্টেশন থাকবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ , কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল।

প্রকল্প বাস্তাবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মোট টাকার ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র প্রকল্প ঋণ। আর বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থাকছে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্ব ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হতে পারে ২ টাকা ৪০ পয়সা। ডিএমটিসিএল প্রাথমিকভাবে এই হারে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্বে যেতে ভাড়া আসবে ৪০ টাকা ২৫ পয়সা।

আর মাত্র কয়েকটি মাস। তারপরই হয়তবা মাথার ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যাত্রীকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌছে দিতে মেট্রোরেলের আওয়াজ শুনবে রাজধানীবাসী।