বরিশাল মুক্ত দিবস আজ
আজ ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকবাহিনী অগ্রসরমান মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে এ শহর থেকে ডেরা গুটিয়ে পালিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী সড়ক, আকাশ ও নৌপথ থেকে একযোগে বরিশাল আক্রমণ করে। বরিশালে ঢোকার মুখে চরবাড়িয়া ও গৌরনদীর কটকস্থলে তারা বাধা পান। চরবাড়িয়ায় গণহত্যা চালিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষকে মেরে ফেলার পর পাকিস্তানি বাহিনী কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বরিশালের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে দক্ষিণাঞ্চলীয় হেডকোয়ার্টার গড়ে তোলে।
সেখানে বাংকার খুঁড়ে, ভারি অস্ত্রের সমাবেশ ঘটান তারা। প্রতিদিন বরিশাল, ঝালকাঠী, গৌরনদীসহ দূরদূরান্ত থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে তারা গুলি করে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দিতো । শত শত মানুষকে ধরে এনে নৃশংস নির্যাতন করতো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই টর্চার সেলে দুই থেকে তিন হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।
৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা করে বরিশাল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে বরিশালে কারফিউ জারি করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। সীমান্তে মিত্র বাহিনী আক্রমণ শুরু করার পর ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই পাক সেনারা বরিশাল ত্যাগের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
বরিশাল শহর কেন্দ্রিক বিভিন্ন সড়ক পথ চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এ উদ্দেশে যাত্রীবাহী স্টিমার ইরানি, কিউইসহ লঞ্চ ও কার্গো বরিশাল স্টিমার ঘাটে প্রস্তুত রাখা হয়। এসব নৌযানে করেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, পাক মিলিশিয়াসহ শহরের দালাল ও রাজাকার কমান্ডাররা বরিশাল ত্যাগ করে।
পাক সেনাবাহিনীর নৌযানগুলোর একাংশ চাঁদপুরের কাছে মেঘনা মোহনায় ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলার কবলে পড়ে। তাদের কিউই জাহাজসহ গানবোট ও কার্গো ধ্বংস হয়। অপর অংশটি বরিশালের কদমতলা নদীতে ভারতীয় বিমানের বোমার আঘাতে নদীতে ধ্বংস হয়। ফলে এসব জাহাজে পলায়নরত সকল পাক সেনা, মিলিশিয়া, রাজাকার কমান্ডার ও দালাল নিহত হয়।
পাকিস্তানি সেনাদের বরিশাল ছাড়ার সংবাদ পেয়ে নবগ্রামের কাছে সুলতান মাস্টারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি প্রথমে শহরে প্রবেশ করে কোতোয়ালি থানায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়। অবরুদ্ধ বরিশালের মুক্তিকামী মানুষ বিজয়ের আনন্দে জয় বাংলা ধ্বনিতে রাজপথে নেমে পড়ে। মুক্ত হয় বরিশাল।