মাউস চাপ দিলেই বেরিয়ে আসছে ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট!
খাটের নিচে বসানো হয়েছে কম্পিউটার। তাতে যুক্ত করা হয়েছে প্রিন্টার। মাউস চাপ দিলেই বেরিয়ে আসছে হাজার ও পাঁচশ টাকার চকচকে নোট। তবে এসব টাকা আসল নয়, সবই জাল। রাজধানীতে বাড্ডার বাসায় এক দম্পতি মিলে মাসে কোটি কোটি টাকা মূল্যের নোট তৈরি করতেন।
খাটের নিচে বসানো হয়েছে কম্পিউটার। তাতে যুক্ত করা হয়েছে প্রিন্টার। মাউস চাপ দিলেই বেরিয়ে আসছে হাজার ও পাঁচশ টাকার চকচকে নোট। তবে এসব টাকা আসল নয়, সবই জাল। রাজধানীতে বাড্ডার বাসায় এক দম্পতি মিলে মাসে কোটি কোটি টাকা মূল্যের নোট তৈরি করতেন।
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েক কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল ঢাকার ভাটারায় নুরের চালার একটি বাড়িতে। দীর্ঘ দশ বছর ধরে এমন জাল টাকা তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিত আব্দুর রহিম ও ফাতেমা দম্পতি। কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে এসব জাল নোট ছড়িয়ে দিতে দেশজুড়ে ছিল ডিলার। পুরো এক লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে খরচ হতো চার হাজার টাকা। এরমধ্যে একহাজার টাকার এক লাখের বান্ডিল ১৫ হাজার টাকা এবং পাঁচশ টাকার একলাখের বান্ডিল ১২ হাজার টাকা বিক্রি করা হতো।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাড্ডার নুরের চালা সাঈদ নগরের একটি সাততলা বাড়ির ষষ্ঠ তলায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করেছে।
এ সময় বাসা থেকে আবদুর রহিম শেখ ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং তাদের সহযোগী হেলাল খান, আনোয়ার হোসেন এবং ইসরাফিল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, কারখানা থেকে প্রায় ৪৩ লাখ টাকার জাল নোট ও এসব নোট তৈরির প্রচুর পরিমাণ উপকরণ পাওয়া গেছে। ঘরোয়া ওই কারখাটির মালিক রহিম ও ফাতেমা।
তিনি বলেন, ফাতেমা ২০১৯ সালে হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় জাল নোট তৈরির সময় অপর সহযোগীসহ হাতেনাতে আটক হলেও তার স্বামী রহিম পালিয়ে গিয়েছিল। এরা সবাই জাল নোট তৈরি ও মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
মশিউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাল নোট খুচরা এবং পাইকারি বিক্রি করার পাশাপাশি গত তিন বছর ধরে ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের আগে জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ার কথা তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে বলে জানান ডিসি।
গ্রেপ্তার আব্দুর রহিম জানান, ২০১০ সালে তিনি এই পেশায় আসেন। তখন জাল টাকা কিনে দোকানে দোকানে ভাঙাতেন। কিন্তু ওই পেশায় তেমন লাভ হতো না। পরে মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনের আশ্বাসে বরিশালের বাউফলের সোহাগ নামে একজনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ছয় মাস তার কাছ থেকে জাল টাকা তৈরির শিখে নিজে আলাদাভাবে টাকা বানানোর কাজ শুরু করেন। জাল টাকা তৈরির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে দুইবার ধরা পড়ে জেলেও খেটেছেন।
কোরবানির হাটে কীভাবে জাল টাকা সরবরাহ করা হতো জানতে চাইলে আব্দুর রহিম বলেন, ‘জাল নোট নিয়ে আমাদের লোকজন ক্রেতা সেজে বাজারে যায়। এরপর গরুর মালিকের সঙ্গে দরদাম করে। পরে সব জাল নোট ওই গরুর মালিককে দেয়া হয়। ওই গরুর মালিক বয়স্ক বা সহজ সরল কি-না তা দেখা হয়। গ্রামের বা সহজ সরল মানুষের কাছে টাকা দিলে তারা এসব না দেখে পকেটে রেখে দেয়। নতুন টাকা ভেবে দেশে চলে যায়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে যারা এসব জাল টাকা তৈরি করে তারা ঘিঞ্জি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে এই কাজ করে। আমাদের গোয়েন্দারা বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা চক্রটি ধরেছি। এই চক্রের বিরুদ্ধে আগেও জাল টাকা বানানোর মামলা আছে।
হাফিজ আক্তার বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওই দম্পতির কাছ থেকে জাল নোট কিনতে আসার আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস