কোন কোন অবস্থায় মেরুদণ্ডে কতটুকু চাপ পড়ে

কোন কোন অবস্থায় মেরুদণ্ডে কতটুকু চাপ পড়ে

মেরুদণ্ড মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। পুরো শরীরের নিয়ন্ত্রণ এই মেরুদণ্ডের সুস্থতার উপরে নির্ভর করে। মেরুদণ্ড আমাদের পুরো শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। মেরুদণ্ডের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের পুরো শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যথাগ্রস্থ হয়। স্বাভাবিক নড়াচড়া এবং চলাফেরা কষ্টদায়ক হয়। মেরুদণ্ড সমস্যাগ্রস্ত হলে যে বিষয়টি প্রথমেই পরিলক্ষিত হয় সেটি হচ্ছে ব্যাকপেইন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অনির্দিষ্ট ব্যাকপেইন শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ লোকের হয়ে থাকে। এই ব্যাকপেইনের অন্যতম প্রধান কারণ মেরুদণ্ডের সমস্যা। আবার এই মেরুদণ্ডের মধ্যে দিয়েই আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকে। মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই স্নায়ুর উপরেও চাপ পড়ে যার কারণে আমাদের দেহে ব্যথাসহ অন্যান্য অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই মেরুদণ্ডের যত্ন নেয়া এবং যে সকল কাজ করলে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত দরকারি।

যেসব কারণে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে-
● আঘাতজনিত কারণে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
● মেরুদণ্ডে কোনো টিউমার হলে অথবা অন্য জায়গার কোনো টিউমার মেরুদণ্ডে আসলে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
● ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ হলে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
● জন্মগত অথবা অন্য কোনো কারণে মেরুদণ্ড অস্বাভাবিক বাঁকা হয়ে গেলে।
● মেরুদণ্ডের কশেরুকা হাড় একটির ওপর আরেকটি উঠে গেলে মেরুদণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
● রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস অথবা অন্য কোন কারণে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে যেটাকে বলা হয় স্পনডাইলোসিস।
● যারা দীর্ঘদিন যাবৎ অতিরিক্ত ভার বহনের কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
● যারা দীর্ঘদিন যাবত ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা পরবর্তীতে তার স্বাভাবিক জায়গা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের শরীর নিয়ন্ত্রণকারি স্নায়ু কে চাপ দিয়ে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
● যারা অস্টিওপোরোসিস এই সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে মেরুদন্ড যেকোনো সময় সূক্ষ্ম ভাঙ্গার সম্ভাবনা থাকে।

দৈনন্দিন জীবনযাপনের তাগিদে এবং জীবিকার সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত মুভমেন্ট করে যাচ্ছে। ফলে তাকে বিভিন্ন পজিশন মেইনটেন করতে হয়। এগুলো সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। ফলে এগুলো আমাদের মেরুদন্ডে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাত্রার চাপ বা প্রেশার তৈরি করে। ফলে আমরা ব্যাক পেইনে আক্রান্ত হই। আসুন, এ সম্পর্কে জেনে নিই-

● যখন আমরা চিত হয়ে শুয়ে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে সবচেয়ে কম প্রেশার পড়ে। এর পরিমাণ ২৫ কেজি। 
● যখন আমরা কাত হয়ে শুই, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে প্রেশারের পরিমাণ ৭৫ কেজি।
●  যখন আমরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে ১০০ কেজি। 
● যখন আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াই এবং সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে প্রেশারের পরিমাণ ১৫০ কেজি।
● যখন কোনো বস্তু সামনের দিকে ঝুঁকে দাঁড়ানো অবস্থায় তোলার চেষ্টা করি, তখন মেরুদণ্ডে প্রেশারের পরিমাণ ২২০ কেজি।
● যখন আমরা চেয়ারে সোজা হয়ে বসে থাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে প্রেশারের পরিমাণ ১৪০ কেজি। 
● যখন আমরা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডে প্রেশারের পরিমাণ ১৮৫ কেজি।
● আমাদের মেরুদণ্ডে সবচেয়ে বেশি প্রেশার পড়ে, যখন আমরা চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় ২০ ডিগ্রি সামনে ঝুঁকে ২০ কেজি ওজনের কোনো বস্তু হাত দিয়ে টেনে তুলি, তখন মেরুদন্ডে প্রেশারের পরিমাণ ২৭৫ কেজি।

চাপ কমানোর উপায়
● যদি কোনো বস্তু অনেক ভারী হয়, তবে তা তুলতে আরও এক-দুজনের সাহায্য নেবেন। এতে ওজনটা ভাগ হয়ে যাবে। কোনো বস্তু তোলার সময় পা দুটি যথেষ্ট ফাঁকা করে নেবেন, এতে সাপোর্ট বাড়ে।

● তুলতে যাওয়া বস্তুটির যথাসম্ভব কাছাকাছি যাবেন, বসে বা দাঁড়িয়ে যেভাবেই হোক, দূরের কোনো বস্তু তুলতে যাবেন না। আমরা অনেক সময় তা–ই করি। যেমন অফিসে হাত থেকে কলম বা কাগজ পড়ে গেল, বসে থেকেই শরীর বাঁকিয়ে দূর থেকে তোলার চেষ্টা করি। তা না করে উঠে গিয়ে কাছাকাছি গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তুলুন।

● কোনো কিছু তোলার সময় হাঁটু ভাঁজ করবেন, পিঠ নয়। বস্তু তোলার সময় পেটের পেশি শক্ত করে নেবেন। যখন জিনিসটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াবেন তখন মেরুদণ্ড বা পিঠ বাঁকা করবেন না, সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াবেন।

●তোলা বা বহন করার সময় মেরুদণ্ড টুইস্ট করে (কোমর থেকে ওপরের অংশ মোচড় দেওয়া) এদিক-ওদিক তাকাবেন না।

ব্যাক পেইনমুক্ত জীবনযাপনের জন্য দাঁড়ানো, বসা, শোয়া এবং কোনো বস্তু বহন করার ক্ষেত্রে সাবধান হই এবং সতর্কতা অবলম্বন করি। সঠিকভাবে ওজন তুলি এবং তা বহন করি। তবেই পরিপূর্ণ সুস্থ থাকা সম্ভব।

লেখকঃ
প্রফেসর  ডাঃ মোঃ  আবু সালেহ আলমগীর
বি পি টি, এম ডি, এম পি এইচ, এম ডি এম আর, পি এইচ ডি
ব্যাক-পেইন ও পাবলিক হেলথ এবং ডিজএ্যাবিলিটি ও রিহ্যাবিলিটেশন  বিশেষজ্ঞ সিনিয়র ফিজিওথেরাপি মেডিসিন কনসালটেন্ট
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান
ফিজিওথেরাপি মেডিসিন এন্ড রি-হ্যাবিলিটেশন ডিপার্টমেন্ট
সাফা - মারওয়া হাসপাতাল লিমিটেড, যাএাবাড়ী মোড়, ঢাকা - ১২০৪
এ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্যঃ ০১৬৪১৫৭৬৭৮৭, ০১৭৩৮৩৯৪৩০৯