ক্ষমতা তিনভাগে বিভক্ত! দেশ চলবে কিভাবে

বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান স্বাধীনতা উত্তর একটি অনন্য মাইলফলক। ছাত্র-জনতার জানবাজ প্রতিরোধের মুখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী রাজত্ব তছনছ হয়ে যায় । দীর্ঘ ১৬ বছরের দমন পীড়ন এবং মৌলিক মানবাধিকার ভূলুন্ঠিত হওয়া স্বাধীনদেশে অলিখিত পরাধীনতার শিকল ছিড়ে নতুন আশার আলো জ্বলে ওঠে। যার নেতৃত্বে তরতাজা কিশোর এবং যুবকদের এক কৃতিত্ব ফুটে ওঠে। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী বৈষম্যবিরোধী কোন ব্যানার ফেস্টুন রাজপথে না উড়লেও পরের দিনগুলিতে একে একে বাড়তে থাকে পরিচিত ব্যানারে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখ ও মুখোশ। স্বাধীনতা নামক শব্দটি নতুন করে বেগবান হয়।
স্বৈরতন্ত্রের গদিতে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেয় গোটা দেশ। জনগণের জান মালের জিম্মাদারি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে নতুন যাত্রার পথ সুগম করে। এরপর থেকেই বদেল যেতে থাকে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের জন্মভূমির নানা প্রেক্ষাপট। অন্তবর্তী কালীন সরকারের ওপর নেতৃত্ব ছেড়ে এগিয়ে চলা বাংলার বয়স আজ ৭ মাস। ভূমিষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রিম্যাচিউর শিশুর পরিচয় সনাক্তের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ভারী হতে থাকে দুর্বল মায়ের কাছে। নির্বাচন নাকি সংস্কার। এই পশ্নের বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখনই বিভক্ত হয়ে পড়ে দেশ গড়ার লক্ষে এগিয়ে চলা শ্লোগান।
বিপ্লব পরবর্তী সংবিধান কার্যকর কি না সে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না থাকলেও সংবিধানের আলোকেই পরিচালিত হচ্ছে যাবতীয় কার্যক্রম। পলাতক সরকারের প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী এমপি কিংবা স্পীকার ও প্রধান বিচারপতিদের শূন্যতা নিয়ে আলোচনা না থাকলেও রাষ্ট্রপতিকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর কতিপয় রাজনৈতিক দল। আবার পলিটিক্যালি ইম্ম্যাচিউর শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়ার পাল্লায় অর্জন বিসর্জন নিয়েও হয়রান গ্রাম বাংলার চায়ের স্টল কিংবা হাট বাজার। সংবিধান আছে আবার সংবিধান নেই। জাতীয় নির্বাচন নাকি স্থানীয় নির্বাচন এসব ঘেরাটোপে শিক্ষার্থীরা তুবড়ি ছড়ালেও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর উচ্চবাচ্যে তটস্থ অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কার যাত্রা।
আওয়ামী লীগের মমদপুষ্ট রাষ্ট্রপতি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্ব তার কাঁধেই বর্তায়। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা কিংবা সেনা প্রধানের শেষ চেষ্টা হিসেবে সবাইকে সতর্ক করার বিষয়টি যেখানে মোটা দাগে রাজনৈতিক দলগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভবিষ্যৎ ঠিক তখনও নির্বিকার রাজনৈকি অঙ্গন। রাষ্ট্রীর স্বার্থে ঐকমত্য কিংবা ছাত্র-জনতার চাওয়ার পাওয়ার মূল্যায়ন কোনটিই স্পষ্ট নয়।
একদিকে রাষ্ট্রপতি ও পতিত আওয়ামী সরকারের আটকে পড়া নেতাকর্মী অন্যদিকে ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় সবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা। সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার যেমন-দ্রব্যমূল্য, শিক্ষাঙ্গন, আমলাতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি সবকিছুই বিঘ্নিত! গণমানুষ, গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা এখন তিনভাগে বিভক্ত করেছে গোটা জাতিকে।
তাহলে কিভাবে চলবে দেশ?
অপ্রিয় সত্য বাক্যটি নিয়েই যত জটিলতা। আমি কার? তুমি কার? দেশ কার? আমি, তুমি ও সে মিলেই যখন আমরা তখন এত বিভক্তি কেন। কেন একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কেই নেই। সত্যি বলতে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে লড়াই করা মানুষের সংখ্য এখনো কোনঠাসা। দলখদারিত্ব আর প্রভাব প্রতিপত্তির দাপটে আবারো চুপসে যেতে বসেছে সাধারণ মানুষের কন্ঠস্বর।
লেখক: বাতেন বিপ্লব, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, চিফ রিপোর্টার, এশিয়ান টেলিভিশন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকৌশলনিউজের এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)