শাহজালাল বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাসসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তৃণমূল জনগণের কাছে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার যে অঙ্গীকার করেছিল তা বাস্তবায়নে সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আজ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তৃণমূল জনগণের কাছে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার যে অঙ্গীকার করেছিল তা বাস্তবায়নে সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আজ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি।
তিনি বলেন, ‘এই চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্ধোধনের মাধ্যমে আমরা তৃণমূল জনগণের কাছে দেয়া বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, কল্পনা করতেন।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ১৩ বছরে যে আর্থ-সামাজিক উন্নতি আমরা করতে পেরেছি সেটা আমাদের দেশের তৃণমূল মানুষের প্রতি যে প্রতিশ্রুতি ছিল সেটারই বাস্তবায়ন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্প গুলোর সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে-‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন আন্ডারপাস’, ‘সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক’, ‘বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক’ এবং ‘রাঙ্গামাটি জেলার নারিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫শ’ মিটার দীর্ঘ সেতু’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ এবং ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড এই নির্মাণের সার্বিক তত্বাবধান করে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রকল্প প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
গণভবন প্রান্তে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন।
শাহজালাল বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস প্রকল্পঃ
‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন দৃষ্টিনন্দন পথচারী আন্ডারপাস’টি নির্মানে ব্যয় হয়েছে ৫৭ দশমিক ৪২ কোটি টাকা।’ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এ ধরণের আন্ডারপাস দেশে এটিই প্রথম। এটির দৈর্ঘ্য ১৩৫ মিটিার এবং প্রস্থ ৫ মিটার। এর অভ্যন্তরে ত্রিকোনাকৃতির দৃষ্টিনন্দন সুরসপ্তক ডোম, ৩২০ মিটার র্যাম, ৬৭৮ মিটার ফুটপাত এবং ৭৬৩ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল এবং প্রতিবন্ধী এবং বয়োবৃদ্ধদের চলাচলের জন্য বিশেষ সুবিধাদি রয়েছে। এতে দ’ুটি লিফট এবং চলন্ত সিঁড়ি রয়েছে।
এটি নির্মানে আধুনিক বক্স পুসিং টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে নির্মানাধীন সময়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।
গত ২৯ জুলাই ২০১৯ এ এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের নিকট মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় ঝরে যায় শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজিব ও দিয়া খানম মিম এর প্রাণ। এর পরই প্রধানমন্ত্রী এ এলাকার জনগণের পারাপারের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে এই আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশ দেন।
সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪-লেন মহাসড়ক প্রকল্পঃ
৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট গ্যারিসন লিংক রোড প্রকল্পটি নির্মাণের ফলে সিলেট বাইপাস থেকে কানাইঘাট এবং শাহ পরাণ সেতু ঘাট থেকে সিলেট শহর বাইপাস পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দ্রুত আর সহজতর হয়েছে। ২৭৪ দশমিক ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত ১৭ পদাতিক ডিভিশনে একটি ‘এডুকেশন ভিলেজ’ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে একটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, আর্মি ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনেষ্ট্রেশন, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ এবং সমাজের প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘ঢাকা প্রয়াস’ স্কুলের আদলে ‘সিলেট প্রয়াস’ স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত এই সড়কটি স্থানীয় স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত আরও সহজতর ও নিরাপদ করবে। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের বাণিজ্যিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও এই প্রকল্পটি ব্যাপক অবদান রাখবে।
বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পঃ
৭৮ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কি.মি.। প্রস্থ প্রায় ৫৯ ফুট। এই মহাসড়কটি নির্মাণে ৭ দশমিক ৫৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ৫টি কালভার্ট, সাইড ড্রেন এবং ক্রস ড্রেনের কাজও এতে রয়েছে।
এ সড়কটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে এই সড়কটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সড়কটি সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচরে চেংগী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু প্রকল্পঃ
রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত একটি জেলা। বর্ষাকালে যখন কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বৃদ্ধি পায়, তখন অতিমাত্রার ঢেউয়ের কারণে দেশীয় ইঞ্জিন চালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে কমে যাওয়ায় এসকল নৌযান চলাচলে বাধার সম্মুখীন হয়। এ পরিস্থিতিতে জেলা সদরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের রাঙ্গামাটি জেলা সদর কিংবা বিভাগীয় সদর চট্টগ্রামে গমনাগমন বাধাগ্রস্ত হতো। বছরের বেশিরভাগ সময় এ জনপদের মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে পার করত। পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ৫শ’ মিটার দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। যা ভবিষ্যতে লংগদু উপজেলা হয়ে মারিষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে। এর ফলে পার্বত্য জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হল। এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পথেও একধাপ এগিয়ে যাবে।