সেতু নয়, যেন মরণ ফাঁদ

সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের যুগিবাড়ী সংলগ্ন বেত্রাবতি নদীর ওপর নির্মিত মুরারিকাটি কাঠের সেতুটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে সেতুটির কাঠের পাটাতন খুলে খুলে পড়ছে। একটি কাঠের সঙ্গে অন্যটির সংযুক্তি না থাকায় সেতুর নিচে পড়ে হরহামেশাই গুরুতর আহত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।

সেতু নয়, যেন মরণ ফাঁদ
মুরারিকাটি কাঠের সেতু

সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের যুগিবাড়ী এলাকার বেত্রাবতি নদীর ওপর নির্মিত মুরারিকাটি কাঠের সেতুটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের অভাবে সেতুটির কাঠের পাটাতন খুলে খুলে পড়ছে। একটি কাঠের সঙ্গে অন্যটির সংযুক্তি না থাকায় সেতুর নিচে পড়ে হরহামেশাই গুরুতর আহত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে সেতুর পাটাতনের ভাঙ্গাচোরা এলোমেলো কাঠগুলো কোনরকম বসিয়ে দিচ্ছেন একজন বৃদ্ধ ভ্যানচালক। এরপর ঝুকিপূর্ণভাবে ভ্যান নিয়ে পার হচ্ছেন তিনি। এভাবেই কাঠের সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন আশেপাশের হাজারো মানুষ।

বহুদিন ধরে কাঠের পরিবর্তে নতুন পাকা সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছেন এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ। কিন্তু তাদের সে দাবি পূরণ হয়নি আজও।

স্থানীয় আনন্দ নন্দী বলেন, প্রায় ৭০ বছর আগে মুরারিকাটি গ্রামের তৎকালীন জমিদার তারক নন্দী এলাকার উন্নয়নে বেতনা নদীর ওপর লোহার ফ্রেম ও কাঠের পাটাতন দিয়ে দক্ষিণ মুরারিকাটি সেতু নির্মাণ করেন। এরপর স্থানীয় দক্ষিণ মুরারিকাটি, গোপিনাথপুর, পাথরঘাটা, ঘর চালা, কাশিয়াডাঙা, কুমারনল যুগীবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী ২০টি গ্রামের মানুষের সাথে ও কলারোয়া বাজার পৌর সদরের সঙ্গে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করছে সেতুটি।

তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে সেতুটি ভেঙে গেলে দুর্ভোগে পড়েন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। পরবর্তীতে এলাকাবাসী কাঠ দিয়ে সেতুটি মেরামত করে কোনোরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে সেতুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক স্থানে কাঠের পাটাতন উঠে গেছে। লোহার কাঠামোগুলোতে মরিচা পড়ে অংশ বিশেষ খসে পড়ছে।

স্বেচ্ছাসেবক অমিত কুমার বলেন, উপজেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই সেতুটি। এটি দিয়ে প্রতিদিন গ্রামের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে পথচারীদের। এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

পথচারী শিখা রানী বলেন, সেতুটির অবস্থা একেবারেই চলাচল অযোগ্য, নড়বড়ে। হাটতে গেলে কাঠগুলো পথচারীদের ঠিক করে নিতে হয়। কদিন আগে পাটাতনের কাঠ সরে গিয়ে ছোট্ট বাচ্চা নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। এমন হতাহতের ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটছে। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কাঠের পরিবর্তে একটি ব্রিজ নির্মাণের।

এ বিষয়ে কলারোয়া পৌরসভার মেয়র মাষ্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, উপজেলার মুরারীকাটি বেত্রাবতি নদীর উপর অন্যতম প্রাচীন সেতু তারক নন্দী। বহুদিনের কাঠের তৈরি হওয়ায় অনোকটা নড়বড়ে তবে বিভিন্ন সময়ে মেরামত করা হয়।

নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নদীর ওপর ১৫০ মিটার টেকসই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট একটি প্রস্তাব পাঠনো হয়েছে। তবে আপাতত চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।