হাসপাতাল উদ্বোধন কি মানুষকে দেখানোর জন্য?
হাসপাতালের পরিচালকের ভাষ্য হলো, তারা মাত্র ২শ ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। এই শয্যা পরিচালনা করার মতই পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল তাদের নেই এখন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, পর্যায়ক্রমে জনবল বাড়ানো হবে ডিএনসিসি ডেটিকেটেড করোনা হাসপাতালে। তিনি বলছেন, হাসপাতালটিতে ইতোমধ্যে ১৩৮ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৮ জনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পর্যায়ক্রমে আরও দেওয়া হবে। যারা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারাই শুধু এই হাসপাতালে যাবেন। আর যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে কোথাও চিকিৎসাধীন, তারা এখানে এসে ভিড় জমাবেন না।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত এই মুহূর্তে দেশের প্রায় এক লাখ মানুষ বাসাবাড়িতে আইসোলেশনে কিংবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বছর দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর থেকেই সরকার বলে আসছিলো আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রস্তুত। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল কোভিড চিকিৎসা নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হবে না। কিন্তু মাস যেতে না যেতেই গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা ফুঠে উঠলো দেশবাসীর কাছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই, আইসিইউ বেড নেই, নেই ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাও। তাতে আবার মন্ত্রী বাহাদুর ক্ষেপে গিয়ে বললেন সব হাসপাতালেই ভেন্টিলেটার আছে। আসলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভেন্টিলেশন আর বাসাবাড়ির ভেন্টিলেটারের মধ্যকার পার্থক্যই হয়তোবা বুঝতে দেরি হয়েছিল মন্ত্রী মহোদয়ের।
তবে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসকদের সুরক্ষাসামগ্রী এবং হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরাঞ্জমের সরবরাহ বাড়ার কারণে করোনা পরিস্থতি নিয়ে মানুষের মধ্যকার ভীতি খানিকটা দূর হয়ে যায়। দেশের সব জেলা এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করে চলতে থাকে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এরই মাঝে নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ করোনার প্রকোপ কমে আসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছুটা ঢিমেতালে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করে। এত বড় ধাক্কা থেকে কোনো শিক্ষা না নিয়ে সেই পুরোনো হিসেবে আবার চলতে থাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। পরিণতি যা হবার তাই। মাসে মাত্র ৬০ লাখ টাকা খরচ বাঁচাতে বসুন্ধারা সিটির মধ্যে গড়ে তোলা সব থেকে বড় করোনা আইসোলেশন সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হলো।
এরই মাঝে আবার চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এসে টালমাটাল করে দিলো দেশকে। আবারও সেই তোড়জোড়। সংক্রমণ বা শনাক্তের হার বাড়তে থাকায় পুরোনো করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার-নার্স সরবরাহ বাড়ানো শুরু হলো। সুরক্ষা সামগ্রী আমদানীর জন্য তোড়জোড় শুরু হলো। আবারো সেই তাড়াহুড়ো।
এই হতাশার মধ্যে আশার আলো নিয়ে জনগনের সামনে আবারো এলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা দিলেন স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় কোভিড হাসপাতাল তৈরি করছি আমরা। মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাঁচা বাজারের বিল্ডিংকে হাসপাতালে রুপান্তরের ঘোষণা দিলেন তিনি। অথচ এই হাসপাতালটি প্রথম উদ্বোধন করা হয়েছিল করোনার প্রথম ঢেউয়ের শুরুর দিকে। সেই হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, সিডিইউ সুবিধা বাড়িয়ে সরকারের মন্ত্রী বাহাদুর ঘোষণা দিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হলো। যার শয্যা সংখ্যা এক হাজার।
কিন্তু মাত্র তিন দিনের মাথায় অস্থায়ী এই হাসপাতালটির পরিচালক বলছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যাক স্টাফ না পেলে এখানে বেশি করোনা রোগী ভর্তি করা কোনোভাবেই সম্ভব না। অথচ উদ্বোধনের দিন বলা হলো হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স, ৭০০ স্টাফ এর ব্যবস্থা করেছে সরকার।
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র তিন দিনে ১শ’ আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৭৫টিতে রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালটিতে। ঐ রোগীসহ হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা ১শ’ ২৪ জন। এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ১৩ জন মারা গেছেন।
হাসপাতালের পরিচালকের ভাষ্য হলো, তারা মাত্র ২শ’ ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। এই শয্যা পরিচালনা করার মতই পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল তাদের নেই এখন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, পর্যায়ক্রমে জনবল বাড়ানো হবে ডিএনসিসি ডেটিকেটেড করোনা হাসপাতালে। তিনি বলছেন, হাসপাতালটিতে ইতোমধ্যে ১৩৮ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৮ জনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পর্যায়ক্রমে আরও দেওয়া হবে। যারা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারাই শুধু এই হাসপাতালে যাবেন। আর যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে কোথাও চিকিৎসাধীন, তারা এখানে এসে ভিড় জমাবেন না।
তাহলে প্রশ্ন হলো, ১ হাজার বেডের হাসপাতালের ঘোষণা দিয়ে লাভ কি? এটা কি শুধুই কথার কথা? না কি মানুষের মন থেকে করোনাভীতি দূর করা? না কি শুভঙ্কের ফাঁকি?
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, প্রকৌশলনিউজ ডটকম
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকৌশলনিউজের এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)