ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: এর অপপ্রয়োগ রোধে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনে কমিটি তৈরি, এর অপপ্রয়োগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন এবং সাংবাদিক মোজাক্কির হত্যাকারীদের গ্রেফতার-এই তিনদফা দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনে কমিটি তৈরি, এর অপপ্রয়োগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন এবং সাংবাদিক মোজাক্কির হত্যাকারীদের গ্রেফতার-এই তিনদফা দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারায় মঙ্গলবার বিকেলে সাধারণ সাংবাদিকদের ব্যানারে এক মানববন্ধনে ঢাকায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতাসহ প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক অংশ নেয়।
এসময় সাংবাদিক হত্যার বিচারহীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগকে একযোগে না লিখে প্রতিবাদ জানান মানবন্ধনকারী সাংবাদিকরা।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের গোলাগুলিতে সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির হত্যার রহস্য উন্মোচন, দোষিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা। সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।একে সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের পথে অন্তরায় হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে মানববন্ধনে এ আইন সংশোধনে নতুনভাবে কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানানো হয়।
এসময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি যখন প্রক্রিয়া শুধু হয় তখন থেকেই বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজসহ সচেতন মহল আইনটির বিরুদ্ধে যুক্তিসহ নানান ভাবে কথা বলা হয়েছে।, প্রথমত হচ্ছে যে, এ আইনের বেশ কয়েকটি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং সাংবাদিকদের লেখনী ওপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। যখনই এই আইনটি পাশ হলো তখন থেকেই দেখছি বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরন করা হচ্ছে। একদিকে সাংবাদিকদের একের পর এক মামলা করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে দিনের পর দিন জেলে রাখা হচ্ছে। একই ভাবে এই আইনটি সাংবাদিকদের লেখনী বন্ধে হুমকি হিসেবে কাজ করছে। সরকারী বিভিন্ন সংস্থা, কর্মকর্তা ও সমাজের দুষ্ট লোকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ভয় দেখিয়ে সাংবাদিকদের তাদের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত করা হচ্ছে। সুতরাং এ আইনটি করার আগ মুহুর্তে সাংবাদিক সমাজ যে আশংকা ব্যক্ত করেছিলো এ আইনটি বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে, এখন সেটি বারবার প্রমানিত হচ্ছে যে আসলে এই আইনটি একদিকে যেমন সাংবাদিকতার ওপর প্রতিবন্ধকতা একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের যে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের যে বাক স্বাধীনতার যে অধিকার বাংলাদেশ সংবিধান দিয়েছে সেটিরও প্রতিবন্ধকতা। সুতরাং পুরো আইনটি যদি বিলুপ্ত করা যায় তাহলে সবচেয়ে ভালো অন্যথায় এ আইনটি সংশোধন করে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে আওতামুক্ত রাখা যায়।
এছাড়াও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আখতারুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রভাবশালীদের কাজে ব্যবহার হচ্ছে কিনা এটি নিয়ে আমরা শুরুতেই সংশয় প্রকাশ করেছিলাম। তার প্রতিবাদে সম্পাদক পরিষদের দাবী ছিলো আইনটি সংশোধন করতে, কিন্তু তা না করে আইনটি সরাসরি পাশ করা হয়। সম্পাদক পরিষদের সেই উদবিগ্ন তা আজকে বাস্তবে পরিনত হয়েছে। কারন আজকে সাংবাদিক সমাজ তারা একটা স্টাটাস দিতে ভয় পায়, তারা মনে করে যে এই স্টাটাস দিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়ত তার মামলা বা জেল হতে পারে এবং সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রমান আপনারা পেয়েছেন। সুতরাং আমরা মনে করি সাংবাদিকরা মত প্রকাশে বিশ্বাস করে এবং তাদের লেখনীতে স্বাধীনতা প্রকাশ পায়, যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভয়ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে, সুতরাং এই আইনের সংশোধন হোক সেটা আমরা আবারও ব্যক্ত করছি। স্বাধীন ভাবে কোন সাংবাদিক যখন রিপোর্ট করতে যায় সেখানে ভয় কাজ করে। পাড়ামহল্লায় লুটেরা বাহিনী তৈরি হয়েছে তারা সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করত্যে চায়, সরকারের উচিত সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা।
৩০ মিনিটের এ মানববন্ধন থেকে সাধারণ সাংবাদিকদের ব্যানারে বাংলা ভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার দীপন দেওয়ান তিনদফা দাবি ঘোষণা করেন। এতে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি সাংবাদিক মোজাক্কির হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্তসহ প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে দাবী তুলেন। ডিজিটাল সুরক্ষা আইন সংশোধনের জন্য কমিটি করে দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবী জানান। এছাড়াও এই আইনের যেসব অপপ্রয়োগ হচ্ছে সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয় তৃতীয় দাবিতে।
মানববন্ধনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন তার বক্তব্যে নিরাপদভাবে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে গুজবরোধ ও সমাজের দর্পন হিসেবে সাংবাদিকদের যথাযথ ভূমিকা রাখতে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
এতে অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, সিনিয়র রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার নাসিরুল্লাহ, মুভিবাংলা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মো. শাহবুদ্দিন মাহতাব, প্রিয়নিউজ টোয়েন্টিফোরের আলআমিন ভূঁইয়া, জিটিভির মনিরুজ্জামান, রুবিনা ইয়াসমিন, ইকবাল অনিক, নিউজ টোয়েন্টিফোরের নাঈম আল জিকো, বৈশাখী টিভির আশিকুর রহমান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির রেজুয়ানুল হক, এনটিভি অনলাইনের মাসুদ রায়হান পলাশ, সময় টিভির সাদিকুর রহমান, যমুনা টিভির নুর নবী সরকার, রাজু মাহমুদ, শাহজালাল উজ্জ্বল, ভয়েস টিভির আনজাম খালেক, দৈনিক দেশ রুপান্তরের আরিফুর রহমান তুহিন, বার্তা বাজারের ভীর সাহাবী প্রমুখ।
প্রকৌশল নিউজ/এমআর/এসআই