প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণ! ঘুষের টাকায় সমাজসেবায় চাকরি

সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক) ওয়ারেছ আলীর বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণ! ঘুষের টাকায় সমাজসেবায় চাকরি

সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইন্সট্রাক্টর (প্রশিক্ষক) ওয়ারেছ আলীর বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

ওয়ারেছ আলীর এই অর্থের বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় চাকরি দেওয়াসহ তার বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান (বর্তমানে ট্রেড ইন্সট্রাক্টর) ওয়ারেছ আলী ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরে বিভিন্ন কর্মচারী পদে অনৈতিক পন্থায় চাকরি দেয়ার বিনিময়ে সহস্রাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতিটি কর্মচারী পদে চাকরির জন্য তিনি জনপ্রতি ১৫-২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন অফিসের নিয়োগ ও বদলি বানিজ্যের সাথেও জড়িত।

তবে তিনি তার এই নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য একা করেননি। তার এইসব অনৈতিক কাজে তাকে সাহায্য করেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ঢাকা জেলার সাবেক সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন এবং সাবেক অর্থ সচিব ও স্টোর কিপার বিল্লাল হোসেন।

শুধু তাই নয়, সরকারি কর্মচারি হয়েও ওয়ারেছ আলী রাজনৈতিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত আছেন বলে অভিযোগ সুত্রে জানা যায়। এমনকি সুযোগ পেলেই তিনি তার বগুড়ার বাড়িতে গিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলেও অভিযোগ আছে।

ওয়ারেছ আলী নিয়মিত ক্যাসিনোতে গিয়ে জুয়া খেলতেন বলেও অভিযোগসুত্রে জানা যায়। তার প্রমাণও মেলে ২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি। সেদিন তিনি সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। যদিও এই বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই দিন তিনি সিঙ্গাপুরে ছিলেন ঠিকই, তবে তা ছিল তার অফিসিয়াল ট্যুর।

সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলায় ব্যস্ত ওয়ারেছ আলী

জানা যায়, পদোন্নতি নিয়ে ওয়ারেছ আলী তার অধিদপ্তরের কর্মচারির সভাপতির পদ হারিয়ে ফেলেন। তাই দ্বিতীয় শ্রেণী কর্মকর্তার পদে পদোন্নতির পর তিনি অঢেল টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে সরাদেশের কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি হন। মেয়াদ শেষের পর আবারও তিনি এই ফেডারেশনের সভাপতি হবার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তার বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করায় তিনি আর তা হতে পারেননি। তাই দ্বিতীয় বার কোন পথ খুঁজে না পেয়ে তিনি আগারগাঁও এলাকায় কয়েকজন নামধারী কর্মচারি নিয়ে একটি ভুয়া ফেডারেশন তৈরী করে নিজেই তার সভাপতি হন বলে অভিযোগ আছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ওয়ারেছ আলী বর্তমানে একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়েও তার সেই ভুয়া কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মহলে চাঁদাবাজি করে আসছেন।

বগুড়ায় ওয়ারেছ আলীর বাড়ি

ওয়ারেছ আলী তার এই নিয়োগ ও বদলি বানিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ ও সম্পদের মালিক হয়েছেন। বগুড়ায় রয়েছে তার ছয়তলা বাড়ি, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও তালতলায় রয়েছে দুইটি নয়তলা ভবন, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। গাইবান্ধা জেলায় রয়েছে ৫০ বিঘা জমি। সিরাজগঞ্জ জেলায় রয়েছে ১০০ বিঘা জমি। এসব সম্পত্তি তিনি তার স্ত্রী ও ছেলের নামে করেছেন। এছাড়াও তার রয়েছে ৪টি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার। 

ঢাকায় ওয়ারেছ আলীর বাড়ি

এসব অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে জানতে সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইন্সট্রাক্টর ওয়ারেছ আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সত্য নয়। কেউ ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করতে পারে।