ট্রাম্পকে নিয়ে সংশয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব
আর মাত্র কয়েক ৯ দিন। তারপরেই শেষ হবে নানা কারনে সমালোচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুগের। কিন্তু এই অল্প কিছু দিনকেই এখন অনেক দীর্ঘ সময় বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তকেই মনে হচ্ছে সংশয়ে পরিপূর্ণ। কারণ প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট নতুন ঝুঁকির আশঙ্কা নিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য প্রেসিডেন্সিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের থাকা প্রতিটি মুহূর্তই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এটি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির আশঙ্কা।
আর মাত্র ৯ দিন, তারপরেই শেষ হবে নানা কারনে সমালোচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুগের। কিন্তু এই অল্প কিছু দিনকেই এখন অনেক দীর্ঘ সময় বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তকেই মনে হচ্ছে সংশয়ে পরিপূর্ণ। কারণ প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট নতুন ঝুঁকির আশঙ্কা নিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য প্রেসিডেন্সিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের থাকা প্রতিটি মুহূর্তই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এটি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির আশঙ্কা।
নিয়ম অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবে নতুন প্রশাসন। জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন ওই প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময় রয়েছে ট্রাম্পের হাতে। এর মধ্যেই ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা উসকে দেন কিনা, বা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেন কিনা—এ প্রশ্নগুলোই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে।
এ বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের দাবিটি বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজে ক্ষমতা নিতে পারেন। ডেমোক্রেটিক দলসহ বেশ কিছু পক্ষ এই বিকল্পটির কথা বলছেন জোরেশোরে। কিন্তু পেন্স এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনটাই অন্তত বলছেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
এ অবস্থায় ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেন্স যদি রোববারের মধ্যে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে কোনো পদক্ষেপ না নেন, তবে আগামীকাল সোমবার তারা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রস্তাব উত্থাপন করবে কংগ্রেসে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবটি দ্রুততম সময়ে প্রতিনিধি পরিষদের সম্মতি আদায় করতে পারলেও সিনেটে তা আবারও আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, এত বড় ঘটনা ঘটার পরও সিনেটের রিপাবলিকান নেতাদের একটি অংশ এখনো নীরব থাকার কৌশলই অবলম্বন করছেন।
এমন ভয়াবহ ঘটনায় উসকানির জন্য ট্রাম্পের শাস্তির দাবি তো দূরে থাক, অনেকেই এর নিন্দা জানানোর কাজটিও করেননি। সঙ্গে রয়েছে দল হিসেবে এমন ঘটনার দায় নিজের কাঁধে নেওয়া বা না-নেওয়ার বিষয়টি। ফলে সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে রিপাবলিকানরা শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া এমন গুরুতর বিষয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের আইনপ্রণেতাদের হাতে সময় বেশ কম রয়েছে। ফলে এই চেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো জাতীয় স্বার্থের বদলে অনেকটাই দলীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কীর্তির জন্ম দিলেন, তার দায় বহন করতে হবে বলে মনে করে রিপাবলিকান দল অনেকটাই রক্ষণশীল ভঙ্গিতে বিষয়গুলো মোকাবিলা করছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের যেসব আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে, সেগুলো তাঁর হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স পালন করবেন। কিন্তু পেন্স কোনোভাবেই পদটি নেবেন না। যদিও ওই পদে ট্রাম্প থাকলে, হাজার সতর্কতা সত্ত্বেও যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তারপরও রিপাবলিকান শীর্ষ নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে নত হতে চাইছে না শুধু দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই।
যদিও তাঁরা বলছেন, এই মুহূর্তে ট্রাম্পকে অপসারণ করা হলে, আবার সহিংসতা ছড়াতে পারে।
রিপাবলিকান দল থেকে ৬ জানুয়ারির পর থেকে কথা খুব কম বলা হচ্ছে। সেদিন যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্পের হয়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলকে চ্যালেঞ্জ জানানো দুই সিনেটর মিসৌরির জশ হলি ও টেক্সাসের টেড ক্রুজ তো এমন ভাব করছেন যেন, ৬ জানুয়ারি এ বছর আসেইনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে জশ হলি নিজের একটি বইয়ের চুক্তি বাতিল হওয়া নিয়ে কথা বলছেন। আর টেড ক্রুজ জানাচ্ছেন, তিনি তো আগে থেকেই ট্রাম্পের সমালোচনা করে আসছেন।
অধিকাংশ রিপাবলিকান নেতা সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছেন। কিন্তু এই সহিংসতার বিপরীতে প্রশাসনের পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য নেই। কারণ, এত বড় অঘটনের পরও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেনি। তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রোনা ম্যাকড্যানিয়েল রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারউইম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আবারও। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় তেমন হেরফের হয়নি বলতে হবে। তাই রিপাবলিকান নেতাদের পক্ষেও তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে পেনসিলভানিয়ার সিনেটর প্যাট টুমির মতো দু-একজন নেতা রয়েছেন, যারা বেশ স্পষ্টভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। টুমির মতে, ‘৬ জানুয়ারি ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন। তিনি বলেন, কিন্তু আমি ঠিক নিশ্চিত নই, এত কম সময়ে এটা করা বাস্তবসম্মত কিনা। এক-দুদিনের মধ্যেই যেখানে তাঁকে বিদায় নিতে হবে, সেখানে এর দরকার কতটা—আমি সত্যিই জানি না। এই পথটিই সেরা হবে কিনা, সে বিষয়েও আমি নিশ্চিত নই।’
এদিকে ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিষয়ে খোদ জো বাইডেনেরও তেমন আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছে সিএনএন। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, এ বিষয়ে জো বাইডেনের আগ্রহ তেমন নেই। কারণ, তিনি এ ধরনের পদক্ষেপকে নিজের প্রশাসনের শুরুর ধাপটির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। একই সঙ্গে যে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তা অর্জনের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ শুরুতেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনে করেন।
সব কিছু ছাপিয়ে ট্রাম্পের ওপরই এখনো নির্ভর করতে হচ্ছে পেন্টাগন, ক্যাপিটল হিল এবং হোয়াইট হাউজকে।