তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানসহ ৬ দফা দাবিতে মানববন্ধন

উত্তরের নদীভাঙন কবলিত জেলা কুড়িগ্রামে গত তিন মাস থেকে চলমান তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীর অব্যাহত ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা হারিয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। এ সকল নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকাস্থ কুড়িগ্রামবাসীর আয়োজনে শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানসহ ৬ দফা দাবিতে মানববন্ধন

উত্তরের নদীভাঙন কবলিত জেলা কুড়িগ্রামে গত তিন মাস থেকে চলমান তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীর অব্যাহত ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা হারিয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। এ সকল নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকাস্থ কুড়িগ্রামবাসীর আয়োজনে শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন বলেন, আমরা কুড়িগ্রামবাসী সব সময় অবহেলিত অবস্থায় রয়েছি। তার ওপর আমাদের জেলায় যেসব নদী রয়েছে প্রতিবছর নদীগুলোর ভাঙনের শিকার হয়ে হাজার হাজার লোক ঘরবাড়িহারা হয়ে পড়ে। আমরা এসব নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাতে আজকে এই মানববন্ধনে এসেছি। আমরা দাবি জানাব, সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দারিদ্র্য তৈরির কারিগর এসব নদীকে যথাযথ শাসন করে।

সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কুড়িগ্রাম সমিতি ঢাকার মহাসচিব সাইদুল আবেদীন ডলার বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্র্যের হার ৭১ শতাংশ। এই দারিদ্র্য বেশ কিছু কারণ হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নদী ভাঙন। শিক্ষার হারও দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, অধিকাংশ সময় জেলার বিভিন্ন অঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে। এসব এলাকায় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয় নদীর চর এলাকার কোমলমতি শিশুরা। ফলে তারা একটা সময় শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। তাই এসব সমস্যার সমাধানে কুড়িগ্রামের নদীগুলোতে দ্রুত বাধঁসহ স্থায়ী সমাধান জরুরি।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ঢাকাস্থ কুড়িগ্রামবাসীর আহ্বায়ক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কুড়িগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে মানুষ। এই জেলার অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। এর মূল কারণ নদী ভাঙন। দুই বছরে জেলার ৪০ হাজার বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়। দারিদ্র্যের হার বেশি এ জেলায়। আমরা এর সমাধান চাই।

মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনে এই এলাকায় এখন পর্যন্ত স্কুল, মসজিদ-মন্দিরসহ হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, রাস্তা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন প্রায় দুই হাজার পরিবার। শুধু রাজারহাটেই চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব পরিবারের অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তা ও অন্যের জমিতে। গত দুই বছরে কুড়িগ্রাম জেলার এ সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।

মানববন্ধনে জানানো ৬ দফা দাবিগুলো হলো, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে; চলমান নদী ভাঙন স্থানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে; রাস্তায় ও অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে; নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণ করে দ্রুত ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঢাকাস্থ কুড়িগ্রামবাসীর আহ্বায়ক মো. আখতারুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এসব নদীর কোথাও কোথাও ভাঙন রোধে দায়সারা কাজ করছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। নাব্যতা কমে যাওয়ায় তিস্তার দুই পাড় উজাড় করে তিস্তা নদী ক্রমাগত প্রস্থে বাড়ছে। এক সময়ের ২ কিলোমিটারের তিস্তা এখন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুস সুলতান মানিক, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদ (সিসাপ) সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার রায় এবং ঢাকাস্থ কুড়িগ্রামবাসীর সদস্য সচিব কাদের বাবু প্রমুখ।