ভারতে ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন চাইল ফাইজার

ভারতে ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন চাইল ফাইজার

কোভিড যুদ্ধ জয়ের প্রথম ধাপ ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে! বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কোভিড টিকাকরণের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে ব্রিটেন। গত বুধবার ব্রিটিশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই গোটা ব্রিটেন জুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করা হবে। তবে এই কর্মসূচি হবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। একমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদেরই টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বরিস জনসন সরকার। আর এবার ভারতেও এই টিকা আমদানি ও তা বিপণনের অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে ফাইজার ইন্ডিয়া। ইতিমধ্যেই ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া-র কাছে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে তারা। জরুরি পরিস্থিতিতে ভারতে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন চেয়েছে সংস্থাটি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে।

তবে ভারতে এই ভ্যাকসিন রাখা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। কারণ এই ভ্যাকসিন রাখার জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোল্ড চেন দরকার। যে পরিকাঠামো ভারতে নেই বললেই চলে। এমনকী টিকার দামও বেশি। দু’টি ডোজ মিলিয়ে খরচ হতে পারে তিন হাজার টাকার কাছাকাছি। সিরামের টিকার দাম এর তিন ভাগের এক ভাগ। অবশ্য ফাইজারের এফিকেসি রেট সংক্রান্ত রিপোর্ট সামনে আসার পর শোনা গিয়েছিল, ভারতেও এই টিকার ট্রায়াল শুরু হবে। অবশেষে সেই আবেদন করল তাঁরা।

গত বুধবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক টুইটে লেখেন, ‘বড় সুখবর। করোনার বিরুদ্ধে সাহায্য আসছে। আগামী সপ্তাহের গোড়া থেকেই টিকাকরণের কাজ শুরু করতে তৈরি এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)।’ ছাড়পত্র মেলায় খুশি ফাইজার-বায়োএনটেক কর্তৃপক্ষও। সংস্থার সিইও অ্যালবার্ট বওরোলা জানান, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম বিজ্ঞানের জয় হবে। সেই অনুযায়ী কাজও চলছিল। মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সিকে (এমএইআরএ) ধন্যবাদ। তারা ব্রিটেনের মানুষকে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই ছাড়পত্র দেওয়ায় বহু মানুষের উপকার হল।’

এমএইআরএ জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। শেষ দফা ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণের পর ওই সংস্থারও দাবি ছিল, তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কী ভাবে কাজ করে এই ভ্যাকসিন? একে নতুন ধরনের এমআরএনএ জাতীয় ভ্যাকসিন বলেছেন গবেষকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ভাইরাসের জেনেটিক কোড থেকে ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম এই টিকা।

বরিস জনসন সরকার ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের ২ কোটি মানুষের টিকাকরণের জন্য ওই সংস্থা থেকে ৪ কোটি ডোজের বরাত দিয়েছে। প্রত্যেককে দু’টি ডোজে টিকা দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে খবর। এ ছাড়া, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ১ কোটি ডোজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। টিকাকরণে কারা অগ্রাধিকার পাবেন, তার প্রাথমিক তালিকাও তৈরি করেছে ব্রিটিশ সরকার। করোনার বিরুদ্ধে যাঁদের ঝুঁকি রয়েছে, এমন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৮০ বছর বয়সি-সহ সোশ্যাল কেয়ার ওয়ার্কারদের প্রথমে এই টিকা দেওয়া হবে।

প্রথম দফায় টিকাকরণের পর আগামী বছর ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের এবং আগে থেকেই স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ডোজের ২১ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। বিশ্বজুড়ে এখনও দাপট দেখিয়ে চলেছে মারণ ভাইরাস। কিছু জায়গায় প্রকোপ নিম্নমুখী হলেও করোনাতঙ্ক থেকে পুরোপুরি নিস্তার মেলেনি। আর সেই কারণেই ভ্যাকসিন আসার প্রহর গুনছে সারা দুনিয়া। এর মাঝেই ফাইজারের টিকার ছাড়পত্র পাওয়া নিঃসন্দেহে আশার আলো। সুত্র: এই সময়