স্থবির সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প
তাঁতিদের সবচেয়ে বড় মৌসুম বাংলা নববর্ষ আর ঈদের বাজার হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রায় পাঁচ লাখ তাঁত শ্রমিক
ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পের জেলা সিরাজগঞ্জ। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি কারণে প্রভাব পড়েছে এই তাঁত শিল্পের ওপরও। তাঁতিদের সবচেয়ে বড় মৌসুম বাংলা নববর্ষ আর ঈদের বাজার হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রায় পাঁচ লাখ তাঁত শ্রমিক। উৎপাদনের পাশাপাশি আয় বন্ধ হয়ে পড়ায় জেলার ক্ষুদ্র এবং মাঝারি তাঁত কারখানা মালিকরাও এখন বিপর্যস্ত। এই অনিশ্চয়তা কবে কাটবে তারও কোনো ধারণা নেই । যে কারণে এই শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লাখ শ্রমিক ও মালিকদের মাঝে শঙ্কা বাড়ছে।
তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, উল্লাপড়া, কামারখন্দ, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার তাঁত পল্লী জুড়ে এখন নীরবতা। অথচ প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ পূজা ও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ডিজাইনের শাড়ী কাপড়সহ নানা ডিজাইনের কাপড় বুনতে নির্ঘুম সময় পার করত শ্রমিকেরা। তাঁতের চিরচেনা খট খট শব্দের মাঝে তাঁতিদের উচ্চকিত কন্ঠের গানে মুখরিত থাকতো পুরো তাঁতপল্লী। কিন্তু এবছর করোনাভাইরাস এর কারণে অনেক তাত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছে হাজারো তাঁত শ্রমিকেরা।
স্থানীয় হ্যান্ডলুম পাওয়ারলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহাজাদপুর, উল্লাপাড়া, কাজীপুর, কামারখন্দ ও সদর উপজেলার দেড় লাখের বেশি ইঞ্জিন এবং হস্ত চালিত তাঁতে তিন লাখ মানুষ জড়িত। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে উৎপাদিত উন্নত মানের শাড়ি-লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতসহ ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারনে তাঁত শিল্পের কাজে সম্পৃক্ত জেলা ও অন্যান্য জেলা থেকে আসা নারী পুরুষ এখন বেকার।
এই দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে কাজ হারিয়েছে অধিকাংশ শ্রমিক। কয়েক দফা লকডাউনে ব্যাপক দুর্বিষহ প্রভাব পড়েছে কাপড়ের বাজারে। সুতার দাম বাড়লেও সেই অনুযায়ী দাম বাড়েনি শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার দাম।
বাজারে কাপড়ের দাম অনুযায়ী তাতে লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আর সরকারি কোন সহযোগিতা না পেলে তাঁত কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের তাতিরা।