উদ্যোক্তা হওয়া হলোনা শফিকের!
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এর জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শফিকুল ইসলাম। এরআগে, চ্যানেল আই এবং ভোরের কাগজেও কর্মরত ছিলেন। প্রায় এক যুগের পেশাগত সাংবাদিতা ছেড়ে বুটেক্স এ যোগদান। এ কারণে ঢাকাতেই বসবাস। কিন্তু গ্রামকে ভুলে যাননি। সুযোগ পেলেই নাড়ির টানে ছুটে যেতেন নিজ গ্রাম খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর দক্ষিণ পাড়ায়। গ্রাম টানে, গ্রাম ভালো লাগে। এবার করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে লম্বা ছুটি পেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। নিজ গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পুকুরটি লিজ নিয়ে মাছের চাষ করেছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করে পুরো পুকুরের মাছই মেরে চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার। আর এর সঙ্গেই অপমৃত্যু ঘটেছে শফিকুল ইসলামের মতো একজন সুশিক্ষিত যুবক ও গণমাধ্যম কর্মীর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এর জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) শফিকুল ইসলাম। এরআগে, চ্যানেল আই এবং ভোরের কাগজেও কর্মরত ছিলেন। প্রায় এক যুগের পেশাগত সাংবাদিতা ছেড়ে বুটেক্স এ যোগদান। এ কারণে ঢাকাতেই বসবাস। কিন্তু গ্রামকে ভুলে যাননি। সুযোগ পেলেই নাড়ির টানে ছুটে যেতেন নিজ গ্রাম খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর দক্ষিণ পাড়ায়।
গ্রাম টানে, গ্রাম ভালো লাগে। এবার করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে লম্বা ছুটি পেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। নিজ গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পুকুরটি লিজ নিয়ে মাছের চাষ করেছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করে পুরো পুকুরের মাছই মেরে চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার। আর এর সঙ্গেই অপমৃত্যু ঘটেছে শফিকুল ইসলামের মতো একজন সুশিক্ষিত যুবক ও গণমাধ্যম কর্মীর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের।
পুকুরে বিষ প্রয়োগের এ ঘটনা ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতের। এ ঘটনায় লিজ গ্রহীতা শফিকুল ইসলাম ২২ ফেব্রুয়ারি ফুলতলা থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। তবে, পুলিশ এখনও পর্যন্ত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। বিষয়টির অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন।
শফিকুল ইসলাম জানান, করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কারণে লম্বা ছুটি পেয়ে তিনি গ্রামেই ছিলেন বেশ কিছুদিন। সেই সুযোগে সখের বসে বাড়ির পার্শ্ববর্তী দামোদর দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফুলতলা রেলস্টেশন সংলগ্ন এক একর আয়তনের পুকুরটি লিজ নেন। টেন্ডারে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দুই বছরের জন্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি লিজপ্রাপ্ত হন। আসন্ন বৈশাখে প্রথম বছর শেষ হবে।
তিনি পুকুরে রুই, কাতল, মৃগেল, সাইফেন, চিতল ও পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২২ মণ ১৯ কেজি মাছ ছাড়েন। যার মূল্য ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া তার বিল ডাকাতিয়ায় থাকা অপর ঘের থেকেও বড় সাইজের মাছ ধরে পুকুরে ছেড়েছিলেন। প্রতিটি মাছের ওজন ২ থেকে ৩ কেজি হয়েছিল। আশা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি মাছ ধরে বিক্রির।
কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। গেল ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে সেখানে বিষ প্রয়োগ করে অধিকাংশ মাছই মেরে চুরি করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাকি প্রায় ৫ থেকে ৭ মণ মৃত মাছ তুলে মাটি চাপা দিয়ে দাফন করতে হয়েছে। আর এতে চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম। তবে, তিনি হাল ছাড়েননি।
এ বিষয়ে তিনি নিজের ফেইসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো প্রকৌশল নিউজ পাঠকদের জন্য- ‘উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। করোনা মহামারির শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় এক একর পুকুর লিজ নিয়ে শুরু করেছিলাম মাছ চাষ। মাছ ছাড়া, পরিচর্যা, খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু চলছিল স্বাভাবিকভাবে। মাছ বিক্রির পরিকল্পনা ছিল চলতি মাসের শেষ দিকে। অফিস থেকে ছুটিও নেওয়া ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার সকালে ইখতিয়ার কাকুর একটা ফোন পেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন শেষ হতে শুরু করে। গত শুক্রবার সকাল ৬.২১ মনিটে জানতে পারি পুকুরের মাছ মারা গেছে অনেক বাকি মাছ গাবায় (ভেসে) গেছে। ধারণা ছিল গুমোট আবহাওয়ার কারণে অক্সিজেন ফল্ট করতে পারে। সেই হিসেবে অক্সিজেন দেওয়া হলো। সঙ্গে অন্যান্য ওষুধও দেওয়া হলো। কিন্তু মাছ মরা কোনোভাবেই বন্ধ হলো না। রাতে আবারও মাছ মরা বৃদ্ধি পেল। আবারও অক্সিজেন দেওয়া হলো। সকালে দেওয়া হলো ওষুধ। কিন্তু ফলাফল একই। মাছ মরা অব্যাহত রইল। বিকালে একজন ফিশারিজ এক্সপার্টকে এনে দেখানো হলো পুকুর। তিনি নিশ্চিত করলেন পানিতে বিষ প্রয়োগ হয়েছে। রাতে পানি টেস্ট করা হলো এবং বিষের অস্তিত্ব মিলল। সকালে মাছ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকালে মাছ ধরার জন্য জালও নামানো হলো। কিন্তু জাল টেনে দেখা গেল মাছও নেই পুকুরে। সামান্য কিছু মাছ পাওয়া গেল। বোঝা গেলো বিষ দিয়ে রাতের আঁধারে মাছ ধরে নিয়ে গেছে কৃষি সন্ত্রাসীরা। শেষ হলো কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। চুরি যাওয়া মাছ এবং মৃত মাছ মিলে আনুমানিক ১৪ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হলাম। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় কিছু মানুষকে সন্দেহ হয়। থানায় জিডি হয়েছে। আশা করি এ ঘটনার পেছনে যারা আছে তাদের তদন্ত করে বের করবে পুলিশ। রাষ্ট্র ও পুলিশের কাছে আবেদন- তদন্ত করে এ কৃষি সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যাতে আর কোনো ‘উদ্যোক্তার স্বপ্ন ভেঙে না যায়।’
এ বিষয়ে ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, 'ঘটনাটির অনুসন্ধান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে চোরেরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু বিষ প্রয়োগের কোনো আলামত উদ্ধার করা যায়নি। এসআই কাইয়ূম জিডির তদন্ত করছেন।'
জড়িত কাউকে শনাক্ত করা গেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।