মামুনুলের সাফাই গাওয়া সেই এএসআই চাকরিচ্যুত

হেফাজত ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির নেতা রিসোর্টে নারী সহ আটক হওয়া মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্য দেয়া কুষ্টিয়া পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রাব্বানীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

মামুনুলের সাফাই গাওয়া সেই এএসআই চাকরিচ্যুত

হেফাজত ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির নেতা রিসোর্টে নারী সহ আটক হওয়া মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে বক্তব্য দেয়া কুষ্টিয়া পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) গোলাম রাব্বানীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলম এএসআই গোলাম রাব্বানীর চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এদিকে, চাকরি হারানোর তিনদিন পর গত ২৬ মে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে সদ্য নির্মিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের কাছে দাঁড়িয়ে হাতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক এএসআই গোলাম রাব্বানী। তার সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

মুখে দাঁড়ি, মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত অবস্থায় ৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায় এএসআই গোলাম রাব্বানী র‌্যাব-পুলিশকে বিষোদগার করে বক্তব্য রাখছেন।

বক্তব্যের শুরুতে গোলাম রাব্বানী দেশের মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আল্লাহ তোমার জন্য যথেষ্ট। কোরআন হাতে নেন। র‌্যাব-পুলিশ সব দৌড় মারবে। দেখেন আপনারা আল্লাহকে ছুলে কি হয়? মুসলমানের কাছে দাঁড়ান। র‌্যাব-পুলিশ, এসপি কাউকে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রকৃত মুমিন কাউকে ভয় পায় না। মানুষকে মানুষ ভয় পাবে না। এই জান-মাল, ইজ্জত, ধর্ম, স্ত্রী, পুত্র-সন্তান সব বিসর্জন দেব আল্লাহর জন্য। পোশাক পড়ে কথা বলেছি, এটাও পোশাক, ওটাও পোশাক। চোরকে চোর বলা পুলিশের দায়িত্ব। ডাকাতকে ডাকাত বলা পুলিশের দায়িত্ব। আলেমকে আলেম বলা পুলিশের দায়িত্ব।’

মোবাইল ফোনে নিজের পুলিশের পোশাক পড়া ছবি দেখিয়ে জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এই দেশে এত মুসলমান কারো চাকরি যায়? আইনের কথা বলার দরকার নেই। আইন এগুলো মানুষের বানানো। রবের পক্ষ থেকে কোরআন নাজিল। সবাইকে কোরআন মানতে হবে। এই পোশাক আমার গায়ে ছিল। আমি কি এখন পুলিশ দাবি করছি? তিনদিন আগে আমার চাকরি চলে গেছে।’

জনগণকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, ‘আমার বক্তব্য ফেসবুক লাইভে দিয়ে দেন। সাংবাদিক ভায়েরা কই, দেন-সারা বিশ্ব জানুক।’

বক্তব্যের শেষ দিকে এসে তিনি বলেন, ‘এই এলাকার সব লোকজন জানবে একজন মুসলমান ছিল। জীবন দিয়ে গেছে। জীবন দিয়া যাব। প্রকাশ্যে গুলি করবে? গুলি লাগা। বহুত ফুঁটাইছি আমি। অস্ত্রকে মুসলমান ভয় পায় না।’

গোলাম রাব্বানীর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুর এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। তিনি কুষ্টিয়ার ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। গত ৩ এপ্রিল গোলাম রাব্বানী পুলিশের পোশাক পরে ফেসবুক লাইভে আসেন। পরে তার লাইভটি ভাইরাল হয়ে যায়।

সেই লাইভে হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য প্রদান করায় ৪ এপ্রিল গোলাম রাব্বানীকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. মুহিদ উদ্দিন বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলমকে নির্দেশ দেন।

পরে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৩ মে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

প্রকৌশল নিউজ/প্রতিনিধি/এমআরএস