সাংবাদিক নান্নু’র মৃত্যু রহস্যের আবর্তে বন্দি
এক বছরেও সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নাননু’র মৃত্যু রহস্যের কুল কিনারা হয়নি। তার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) তদন্ত করছে। এ ঘটনায় ডিবি চার মাস আগে সাংবাদিক নাননুর স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এরপর থেকে মামলার তদন্ত কাজ থেমে গেছে। তার মৃত্যু রহস্য অনেকটা আলোচনার বাইরে চলে গেছে।
এক বছরেও সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু’র মৃত্যু রহস্যের কুল কিনারা হয়নি। তার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) তদন্ত করছে। এ ঘটনায় ডিবি চার মাস আগে সাংবাদিক নান্নু'র স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এরপর থেকে মামলার তদন্ত কাজ থেমে গেছে। তার মৃত্যু রহস্য অনেকটা আলোচনার বাইরে চলে গেছে।
গত বছরের ১১ জুন রাত সাড়ে ৩ টার দিকে বাড্ডা থানাধীন আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর রোডের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর পিস তাজমহল অ্যাপার্টমেন্টের দশ তলার ফ্ল্যাটের ছেলে স্বীপ্নল আহমেদ পিয়াসের কক্ষে অগ্নিকান্ডে দগ্ধ হন দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান প্রতিবেদক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু। দগ্ধ অবস্থায় তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় প্লাস্টিক এ্যান্ড বার্ণ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে ভর্তির পর ১৩ জুন সকালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ঘটনার ১৫ দিন পর ২৯ জুন নান্নু’র বড় ভাই মোঃ নজরুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামীরা হলেন নান্নু’র স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবী (৪৫) এবং শাশুড়ি মোসাম্মদ শান্তা পারভেজ (৬২)। পুলিশ মামলাটির তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করে।
সাংবাদিক নান্নু’র মৃত্যুর আগে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ভোরে ওই কক্ষে একই কায়দায় অগ্নিকান্ডে তার একমাত্র সন্তান স্বীপ্নল আহমেদ পিয়াস দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছে, সাংবাদিক নান্নু ও তার ছেলে মৃত্যুর ঘটনাটি একই সূত্রে গাঁথা। তবে ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস তদন্ত রিপোর্ট দেয় যে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে প্রচন্ড বিস্ফোরণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পিয়াস মারা যায়।
ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্ট :
নান্নু’র মৃত্যুর ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস আগুনের সূত্রপাতের কারণ অনুসন্ধানে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে-তা তার সহকর্মীদের অনেকেই সন্দেহ পোষন করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের দাখিল করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ রুমটিতে সবসময় বায়োগ্যাস (হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও স্বল্প পরিমানে অ্যামোনিয়া) আটকে থাকতো। রুমটি সব সময় এয়ারটাইট ও অব্যবহৃত ছিল। ফলে রুমটিতে প্রচুর বায়োগ্যাস মজুদ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঘটনাকালীন সময়ে মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু উক্ত রুমে প্রবেশ করেন। তিনি ধুমপানের জন্য লাইট জ্বালালে অথবা কোনো বিদ্যুতের সুইচ অন করলে স্পার্কের সৃষ্টি হয়ে রুমটিতে আগুন লেগে যায়।
স্ত্রী যা বলেন :
নান্নু মৃত্যুর পর তার স্ত্রী পল্লবী ডিবি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি অগ্নিকান্ডে ছেলের মৃত্যুর পর ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ করে চলে যান। পরে ভবন নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান পিস ডেভেলপার ফ্ল্যাটটি মেরামত করে দেয়। ওই বছরের ৩১ মে তারা ফ্ল্যাটে ওঠেন। এরপর থেকে ছেলের কক্ষে তারা নামাজ পড়েন। ঘটনার দিন ১১ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে অফিস থেকে বাসায় এসে গোসল করে রাতের খাবার সারেন। এরপর তিনি ছেলের কক্ষে যান। কক্ষের বারান্দায় স্ত্রীর সঙ্গে কথোপথন হয়।
বাক-বিতন্ডার সময় নান্নু বলেছিলেন, ‘আমি সব ফাঁস করে দিব। কাউকে ছাড়বো না।’ জবাবে স্ত্রী পল্লবী বলেছেন, ‘আমারে তুমি মাফ করে দাও। আমি আর করবো না।’ এরপর পল্লবী ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার পর নান্নু কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। এর কিছু সময় পর প্রচন্ড শব্দ হয়। নান্নু পিয়াসের ঘরের দরজা খুলে দগ্ধ অবস্থায় ছাদের সিঁড়ির দিকে দৌড় দেন। ছাদ থেকে পানি ছিটানোর পাইপ এনে আগুন নেভানো শুরু করেন।
সূত্র আরো জানায়, ঘটনার দিন রাতে ওই কক্ষ সংলগ্ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে নান্নু ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছিল। তাই কক্ষটি সব সময় বদ্ধ থাকত না। কক্ষের দরজা খোলামেলা করা হলে ভবনের ১০ তলার ফ্ল্যাটে বায়োগ্যাস জমে থাকার কথা নয়।
একটি ভিডিও ফুটেজ ঘিরে রহস্য : পিস তাজমহল অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর নান্নু দশতলা থেকে লিফট দিয়ে বেসমেন্টে নেমে আসেন তখন তার পরনে ছিল একটি কালো প্যান্ট, গলায় অফিসের পরিচয়পত্র ঝুলানো এবং শরীরে একটি সাদা শার্ট জাতীয় কাপড় প্যাচানো। তিনি বেসমেন্টে এসে লিফটের কাছে একটি চেয়ারে বসেন। ১০ মিনিট পর তিনি হেঁটে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে একজন সিকিউরিটি গার্ডকে সাথে নিয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটের মালিক টুটুলের গাড়িতে করে হাসপাতালে যান। ওই সময় তার সঙ্গে স্ত্রী পল্লবীকে দেখা যায়নি।
হাসপাতালে ভর্তির ১ ঘন্টার পর পল্লবী তার স্বামীকে দেখতে যান। এছাড়া পল্লবী তার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন যে অফিস থেকে নান্নু ফেরার পর গোসল করে রাতের খাবার খেয়েছেন। কিন্তু অগ্নিকান্ডের পর নান্নু'র গলায় অফিসের কার্ড ঝুলানো দেখে পল্লবীর প্রতি সন্দেহ তুলেছেন।
এসব ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালীন নোমানী বলেন, সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু ডিআরইউ’র একজন নেতা ছিলেন। তার মৃত্যু রহস্য সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস