ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করলেই ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে নারী নিয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের অবস্থানের ঘটনা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের তৃতীয় ও সমাপনী বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্ট-কাণ্ড নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে নারী নিয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের অবস্থানের ঘটনা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের তৃতীয় ও সমাপনী বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্ট-কাণ্ড নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজত কর্মীদের বিভিন্ন এলাকায় উগ্র আচরণ, ভাঙচুরে ক্ষোভও জানিয়েছেন প্রথানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ধর্মের নামে তাদের অধর্মের কাজ করায় ইসলাম আজ হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, “কাল কী দেখলাম? ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজ… জনগণ মেনে নেবে না। কিছু মানুষ ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করছেন। তারা আগুন সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। আবার অন্য নারী নিয়ে রিসোর্টে গিয়ে ফুর্তি করছেন। এদের জন্য ইসলাম ধর্ম আজ কলুষিত।” তিনি বলেন, “এদের জন্য বিশ্বে ইসলাম আজ জঙ্গিদের ধর্ম। এদের আবার সমর্থন করছে বিএনপি-জামায়াত।”
শনিবার মামুনুল হক এক নারী নিয়ে সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে ঘেরাও করে। হেফাজত নেতা তাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও তার নাম, শ্বশুরবাড়ি, শ্বশুরের নাম নিয়ে যে তথ্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে সেই নারীর দেয়া তথ্যে কোনো মিল নেই।
মামুনুল বলেছেন, তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আমেনা তইয়্যেবা। বাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম। তবে সেই নারী জানিয়েছেন তার নাম জান্নাত আরা, বাবার নাম অলিয়র, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
দুইজনের তথ্যে নানা অনিয়মের পর রাতে তিনটি মোবাইল কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ফাঁস হয়। এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে স্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন।
পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন।
এরপর মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে। পারিবারিকভাবেই এই বিয়ে হয়েছে। পরদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি একে একটি মানবিক বিয়ে উল্লেখ করে লেখেন, সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ির আগে তিনি সংসার ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দুর্দশায় পড়ে যায়। সে সময় তিনি বিয়ে করে নিয়েছেন তাকে।
তবে মামুনুল যখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে অসংলগ্ন কথা বলছিলেন, তখন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে হেফাজতের স্থানীয় কর্মীরা। তারা রিসোর্টে গিয়ে ভাঙচুর করেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভেঙেছেন, হামলা হয়েছে দোকানপাট, পুলিশ বক্সে।
প্রধানমন্ত্রী হেফাজত কর্মীদের এই তাণ্ডবে যে বিরক্ত, সেটি তার বক্তব্যে ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্বের সবচেয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার ধর্ম। এরা ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করে বলে আজ ইসলাম হুমকির মধ্যে। এরা আসলে ধর্ম ব্যবসায়ী। এদের ছাড় দেয়া হবে না। যারাই ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
আগের দিন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমও সংসদে দেয়া বক্তব্যে হেফাজতকে সতর্ক করে বলেন, এদের আর ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এদের নাম হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু এরা ধর্মের নামে অধর্ম করে। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জামায়াত-বিএনপি। কিছু হলেই তারা সরকারি অফিস, আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়। আগুনে কি একজনের বাড়ি পোড়ে? কাল যদি আপনাদের বাড়ি, মাদ্রাসায় আগুন লাগে, আপনারা কী করবেন? মানুষ কি তা বসে বসে দেখবে? ”