আজ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা
আজ বুধবার মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই গতবারের মতো এবারও ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছাস থাকার কথা তা ম্লান করে দিয়েছে বৈশ্বিক অতিমারী করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯)।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধকল্পে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত শেষে কোলাকোলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী ও সারাবিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পৃথক বাণীতে তারা মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। ‘আযহা’ অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ করা। ঈদ-উল-আযহা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়।
কঠিন এ সময়ে দেশের আপামর জনগণের প্রতি কোরবানির মর্মার্থ অনুধাবন করে সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদ-উল-আযহা। তিনি আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদ-উল-আযহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
ঈদ-উল-আযহার এই দিনে তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এক সংকটময় সময়ে ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। জনগণকে সব সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখছে।
এবারও হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদ-উল-আযহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে ৫টি ঈদ জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।
সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ-উল-আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সময়সূচি অনুযায়ী বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হক, মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।
চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম, মুকাব্বির থাকবেন ক্বারী মো. ইসহাক।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান, মুকাব্বির থাকবেন মো. শহীদুল্লাহ।
এই ৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতী মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
বতর্মান করোনা পরিস্থিতিতে বিবেচনায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১২ জুলাই জারীকৃত বিজ্ঞপ্তি অনুসরণপূর্বক যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের খতিব-ইমাম, ধর্মপ্রাণ মুসল্লী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় পবিত্র ঈদ-উল-আযহার জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ-উল-আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া একই সময়ে ফজলুল হক মুসলিম হল মসজিদে ঈদের জামাত হবে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের এসব জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
যথাযথ ধর্মীয় মর্যদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদ-উল-আযহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ি পশু কোরবানি করবেন।
সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধাশ্রম, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কুরবানীকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদ-উল-আযহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লীদের সচেতন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)’কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপি মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় শনিবার দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন।
নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনার মতো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কুরবানীর ঈদ হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেওয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুঃস্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থবিধি মেনে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানীর পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস