আমলার হাতে হেনস্থার শিকার সাংবাদিককেই উল্টো দায়ী করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সচিবালয়ে পাঁচ ঘন্টা আটকে রাখার পর হেনস্থার শিকার হওয়া প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের উপরই উল্টো দায় চাপালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
সচিবালয়ে পাঁচ ঘন্টা আটকে রাখার পর হেনস্থার শিকার হওয়া প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের উপরই উল্টো দায় চাপালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
স্বপন দাবি করেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কেউ আটকে রাখেনি, এমনকি নির্যাতন বা আঘাতও করেনি। সাংবাদিক নিজেই মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এক ব্রিফিংয়ে সাঙবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একজন ব্যক্তি সচিবের পাশের রুমে যেখানে ফাইলগুলো ছিল সেখানে ঢুকে ফাইলের ছবি তুলছিল এবং কিছু ফাইলও উনি নিয়েছিল। তখন সেখানকার ডিউটি পুলিশ এসে দেখেছে যে একজন ব্যক্তি ওখানে ফাইলের ছবি তুলছে, কিছু ফাইল ব্যাগে ঢুকিয়েছে এবং শরীরেও ঢুকিয়েছে। তখন ডিউটি পুলিশ চিল্লাচিল্লি করলে আমাদের অফিসারেরা আসে। বরং সাংবাদিক নিজেই মাটিতে পরে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। তাকে সেই কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না এবং তাতেই এত সময় লেগেছে।
তিনি বলেছেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের কাছে থাকা ফাইলগুলো ফেরত নেবার জন্য তাকে বড়জোর আধাঘণ্টা আটক রাখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। সাংবাদিকরা সেখানে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্থার প্রতিবাদে একযোগে সবাই সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেন।
পরে এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম করোনাভাইরাসের টিকা সম্পর্কে রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্প্রতি স্বাক্ষর করা চুক্তি বিষয়ক নথিপত্র নেবার চেষ্টা করছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে ফাইলগুলো সে নিয়েছে সেগুলো ছিল (করোনাভাইরাসের ) টিকা সংক্রান্ত। এগুলো গোপন নথি। আমরা রাশিয়ার সাথে যে টিকা চুক্তি করছি, চীনের সাথে চুক্তি করছি, এগুলো নন ডিসক্লোজার চুক্তি। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলেছি যে আমরা এটা গোপন রাখবো। তো সেগুলো যদি বাইরে চলে যায় তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলাম এবং আমাদের তারা টিকা নাও দিতে পারে। এতে দেশের বিরাট ক্ষতি হতে পারে।’
সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরির চেষ্টা ও মোবাইল ফোনে ছবি তোলার অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের কক্ষে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর রাতেই তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনে মামলা করে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সেই মামলার শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আর একটি প্রশ্ন ছিল এত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কেন সচিবের পিএসের কক্ষে ছিল এবং সেই কক্ষে কোন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যামেরা বাইরে রয়েছে। কক্ষে তা থাকার কথা নয়।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য নানা সময় আলোচিত হয়েছেন। তাকে ভুয়া মামলায় গ্রেপ্তারে অভিযোগে দেশী এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।