ইরানের পরমানু সক্ষমতা বাড়াতে নতুন আইন

ইরানের পরমানু সক্ষমতা বাড়াতে নতুন আইন

জাতিসংঘের পরিদর্শন বন্ধ করতে এবং ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে পরমাণু সক্ষমতা বাড়াতে নতুন একটি আইন পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার পর এই পদক্ষেপ নিলো তেহরান।

নতুন আইন অনুযায়ী, আগামী দুই মাসে ইরানের ওপর থেকে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে সরকার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী সম্মত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম উৎপাদন করবে।

গত শুক্রবার রাজধানী তেহরানের বাইরে রাস্তার পাশে রহস্যমূলক এক হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির স্থপতি মোহসেন ফাখরিজাদেহকে। ইরান বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েল এবং একটি নির্বাসিত একটি বিরোধী গোষ্ঠী রিমোট-কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত অস্ত্র ব্যবহার করে ফাখরিজাদেহকে গুলি করে হত্যা করেছে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ফাখরিজাদেহ-এর। তবে দেশটির সরকার বারবারই বলে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মযজ্ঞ পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।

পরমাণু অস্ত্র যাতে উৎপাদন করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বরাবরই নানা ধরণের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে আসছে দেশটি।

ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদিত আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলোকে দুই মাস সময় দেওয়া হবে দেশটির তেল এবং অর্থনৈতিক খাতের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে আসলে ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ করা হয়েছিল।

এই সময়ের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলে সরকার ইউরেনিয়াম উৎপাদন ২০ শতাংশ বাড়াবে এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ বসাবে যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে কাজ করবে। দেশটির নাতান্জ এবং ফর্দো পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেয়া হবে।

বুধবার ইরানের ফার্স সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, ‘আজ এক চিঠিতে নতুন আইন কার্যকর করতে প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার।’

আইনটি অনুমোদনের আগে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, তার সরকার এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়। একে ‘কূটনীতির জন্য ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন এবং তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য বলেছেন যে, তিনি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনবেন এবং তেহরান যদি ‘পরমাণু চুক্তির শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলে’ তাহলে নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করা হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করতে যাচ্ছেন বাইডেন।

চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু উৎপাদনের মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে সীমিত রাখার শর্ত ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ভঙ্গ করেছে ইরান। এর পর থেকে এই হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে।

নিম্ন মাত্রায় পরমাণু উৎপাদন যাতে মূলত ৩-৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম-২৩৫ থাকে, তা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অস্ত্র তৈরি করতে হলে ৯০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম থাকতে হবে।