ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দখলদার ইসরাইলের জন্য ন্যূনতম শাস্তি: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দখলদার ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা ইরানের ন্যায্য অধিকার। প্রয়োজন হলে আবারও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হবে বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দখলদার ইসরাইলের জন্য ন্যূনতম শাস্তি: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দখলদার ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হামলা ইরানের ন্যায্য অধিকার। প্রয়োজন হলে আবারও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হবে বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, দায়িত্ব পালনে আমরা বিলম্ব করি না, আবার তাড়াহুড়োও করি না। সামরিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মতে যা সঠিক ও যা যৌক্তিক তা আমরা সঠিক সময়ে করে থাকি। এরিমধ্যে সঠিক সময়ে দায়িত্ব পালন করা হয়েছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দখলদার ইসরাইলের জন্য ন্যূনতম শাস্তি। সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের অস্তিত্ব কৃত্রিম, এটা টিকবে না। ইসরাইল পুরোপুরি আমেরিকার সহায়তায় কষ্ট করে নিজের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে।

লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাত উপলক্ষে এবং দখরদার ইসরাইলে ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযানের প্রথম বার্ষিকীকে সামনে রেখে আজ তেহরানে ইমাম খোমেনী (রহ.) মুসাল্লায় জুমার নামাজের ইমামতি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, তেহরানের জুমার নামাজে আমার ভাই, আমার প্রিয় মানুষ, আমার গর্ব, মুসলিম বিশ্বের প্রিয় মুখ, এই অঞ্চলের জাতিগুলোর কণ্ঠস্বর এবং লেবাননের উজ্জ্বল রত্ন জনাব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর প্রতি  শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সম্পর্কে আরও বলেন, আমাদের মাঝে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শরীরী উপস্থিতি না থাকলেও তাঁর পথ ও বক্তব্য আমাদের সাথে থাকবে। তিনি ছিলেন অত্যাচারী দানবদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ঝাণ্ডা। তিনি ছিলেন নির্যাতিত মানুষদের সাহসী কণ্ঠ ও সমর্থক। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সত্যসন্ধানী ও সত্যপথের সংগ্রামীদের উৎসাহ ও সাহসের উৎস ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের পরিধি লেবানন, ইরান ও আরব দেশগুলোর গণ্ডিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই মহান ব্যক্তির শাহাদাত তাঁর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

তিনি বলেন, জীবদ্দশায় লেবাননের জনগণের প্রতি শহীদ নাসরুল্লাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল এই যে, ইমাম মুসা সাদ্‌র ও সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের হারিয়ে হতাশ হবেন না। নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন, আগ্রাসী শত্রুর মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন এবং তাদের পরাজিত করুন। হে আমার প্রিয়ভাজনেরা! লেবাননের প্রতিশ্রুতিশীল জাতি! হিজবুল্লাহ ও আমাল আন্দোলনের উচ্ছ্বসিত যুব সমাজ! হে আমার সন্তানেরা! আজও আমাদের প্রিয় শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তাঁর দেশের জনগণ, প্রতিরোধ ফ্রন্ট এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর কাছে এটাই চান।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইসলামি জিহাদের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর বড় কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম নয় বলেই নিকৃষ্ট ও অসভ্য শত্রু দখরদার ইসরাইল বেসামরিক মানুষ হত্যাকে নিজের বিজয়ের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করছে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেছেন, বেসামরিক মানুষদের ওপর ইসরাইলি বোমা হামলা ও হত্যার পরিণতিতে জনরোষ বাড়বে। (আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে) মানুষ আরও অনুপ্রাণিত হবে, জীবন উৎসর্গ করার মনোভাব বাড়বে, রক্তপিপাসু জায়নবাদী নেকড়েদের ঘাড়ের চারপাশের ফাঁসটা আরও টাইট হবে এবং চূড়ান্তভাবে তাদের অস্তিত্ব নির্মূল হয়ে যাবে। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহর সুচিন্তিত পরিকল্পনায় হিজবুল্লাহ যুক্তিসঙ্গতভাবে ধৈর্যের সাথে ধাপে ধাপে বেড়ে উঠেছে। হিজবুল্লাহ বিভিন্ন পর্যায়ে দখলদার ইসরাইলকে পেছনে ঠেলে তার শত্রুদের কাছে নিজের দৃঢ় অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে।আহত ও রক্তাক্ত লেবাননের প্রতি ঋণ শোধ করা আমাদের সবার দায়িত্ব, বিশ্বের সব মুসলমানের দায়িত্ব। হিজবুল্লাহ এবং শহীদ সাইয়্যেদ নাসরাল্লাহ গাজাকে রক্ষা, আল-আকসা মসজিদের জন্য জিহাদ এবং দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের ওপর আঘাত হানার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চল তথা মুসলিম বিশ্বকে অনন্য সেবা দিয়ে গেছেন।

ইসলামী বিপ্লবের নেতা আরও বলেন, আমেরিকা ও তার মিত্ররা দখলদার ইসরাইলকে এই অঞ্চলের সমস্ত সম্পদ দখলের হাতিয়ারে পরিণত করতে চায়। দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জেদি অবস্থানটা তাদের ঐ ধ্বংসাত্মক নীতিকে আড়ালে রাখতে কাজ করছে। আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো  জায়নবাদী ইসরাইলকে এই অঞ্চল থেকে পাশ্চাত্যে জ্বালানি রপ্তানি এবং পাশ্চাত্য থেকে এই অঞ্চলে পণ্য ও প্রযুক্তি আমদানির গেটওয়েতে রূপান্তরিত করতে চায়। এই নীতি দখলদার ইসরাইলের টিকে থাকা নিশ্চিত করবে এবং তাদের ওপর সমগ্র অঞ্চলের নির্ভরতা বৃদ্ধি করবে। এটা অলীক কল্পনা। যে বা যারাই জায়নবাদী ইসরাইলের ওপর আঘাত হানবে তারা গোটা মানবতার সেবক হিসেবে গণ্য হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে, জায়নবাদী ইসরাইল হচ্ছে সেই 'নিকৃষ্ট গাছ যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্নকৃত', আল্লাহর ভাষায় 'যার কোন স্থিতি নেই' (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ২৬)।