তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই : সাবের হোসেন

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সব ধরনের তামাকপণ্য আরো সহজলভ্য হবে। সেইসঙ্গে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকের ব্যবহার বাড়বে। হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি এবং সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয়ের সুযোগ হারাবে।

তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই : সাবের হোসেন

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সব ধরনের তামাকপণ্য আরো সহজলভ্য হবে। সেইসঙ্গে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকের ব্যবহার বাড়বে। হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি এবং সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয়ের সুযোগ হারাবে। 

রোববার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আায়োজিত অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এমনটাই বলেছেন সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদসহ দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

অনুষ্ঠানের প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে তামাক কর বিষয়ক প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয় বর্তমানে সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্ন স্তরের সিগারেট এবং প্রায় ১৬ শতাংশ মধ্যম স্তরের সিগারেট। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এই দুই স্তরের সিগারেটের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। 

জানানো হয়, তামাকে বর্ধিত করারোপ একটি দরিদ্র-বান্ধব উদ্যোগ। দাম বাড়লে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা অধিকহারে হ্রাস পায়। এতে অকাল মৃত্যু হ্রাসসহ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস পায়। ফলে তামাকের কারণে দরিদ্র গৃহস্থালিতে উৎপাদনশীলতা এবং আয় সংক্রান্ত যে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এবছরের বাজেটেই সিগাটেরের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে সুনির্দিষ্ট কর দিতে হবে। আমরাতো মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছি। আমরা তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই। গত একবছরে কোভিডে যত মানুষ মারা গেছে তারচেয়ে দশ-পনের গুণ মানুষ বছরের বেশি মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে। তাহলে আমরা তামাককে নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন হব না। প্রধানমন্ত্রী কল্যাণ রাষ্ট্রের পক্ষে। আমি জানি উনি এসব কথা শুনবেন, না শুনলে বলতাম না। 

অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা সব তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলেছিলাম কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেটা করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই বাজেট প্রস্তাব পরিবর্তন করতে পারেন। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কমদামি সিগারেটের দাম এক ধাক্কায় বাড়াতে হবে। ফলে তরুণরা ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা আগামীর স্বাস্থ্যবান তরুণদের পেতে চাই। তাহলেই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সুবিধা আমরা পাব।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তাই এখানে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল তাহলে রাজস্ব বাড়তো এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যেত।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।

বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে ২০২১-২২ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য কিছু প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে - সিগারেটের সকল ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য নিম্ন স্তরে ৫০ টাকা, মধ্যম স্তরে ৭০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে যথাক্রমে ৩২.৫০ টাকা,  ৪৫.৫০ টাকা, ৭১.৫০ টাকা এবং ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। 

ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ।