ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের বিকল্প নেই : শিল্পমন্ত্রী
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিসিক ওয়ানস্টপ সার্ভিসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। আরও উপস্থিত ছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনসহ প্রমুখ।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের উদ্বোধনের মাধ্যমে বিসিক নতুন যুগে প্রবেশ করল। দেশ শিল্পায়নের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মত বাংলাদেশে শিল্পায়নে আমরা নতুন ইতিহাস তৈরিতে সক্ষম হবো। বিসিকের চলমান কার্যক্রম এই ইতিহাস তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কোনো বিকল্প নাই। কেননা বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান দ্রুত উন্নয়নের স্বার্থে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীকে প্রয়োজনীয় সব সেবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো ধরণের ভোগান্তি ছাড়াই নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের বিকল্প নেই। উদ্যোক্তারা শিল্প নিবন্ধন সেবা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে থেকে গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৭ সেবাও ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার জন্য বিসিক কার্যক্রম শুরু করেছে। বিসিকের নিজস্ব আরও ২৯ সেবা এবং বিসিক বহির্ভূত ১৩ সেবা ক্রমে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর ন্যায় বিসিকের শিল্পনগরীসমূহের আওতাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের নিমিত্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে কাজ করে যাচ্ছে বিসিক।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বিসিক কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাগণকে অল্প সময় ও খরচে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদান করতে পারবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেকটি অনুষঙ্গ। বিসিকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার ফলে এখন থেকে উদ্যোক্তাগণ ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে পারবেন। ফলে তাদের একদিকে যেমন সময় কম লাগবে অপরদিকে অর্থেরও স্বাশ্রয় হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান এনডিসি বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার ফলে বিনিয়োগে আগ্রহী উদ্যোক্তাদেরকে দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর ফলে বিসিক শিল্পনগরীসমূহে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে এবং দেশের শিল্পায়নের ধারা বেগবান হবে। তিনি ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইনে অন্তর্ভুক্তির ফলে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা বিসিকের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ সংশ্লিষ্ট সকল সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন করে একই জায়গা থেকেই এসকল সেবা পাবেন। ফলে কোনো বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য সেবার জন্য আর সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে যেতে হবে না।
বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, বিসিক জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে শিল্পায়নের ধারা বেগবান করার লক্ষ্যে পোষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিসিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি, শিল্প নিবন্ধন প্রদান, দেশের সম্ভাবনাময় এলাকায় শিল্পনগরী স্থাপন, লবণ শিল্পের উন্নয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ প্রদান, উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনে সহায়তাকরণের জন্য মেলা আয়োজন, নতুন নতুন নকশা ও নমুনা উদ্ভাবন ও বিতরণ এবং মধু শিল্পের উন্নয়নসহ বিভিন্নমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সারাদেশে বিসিকের ৭৬ শিল্পনগরী রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিকভাবে গুরত্বপূর্ণ এলাকায় ৪০ হাজার একর জমিতে ১০০ পরিবেশবান্ধব শিল্পপার্ক স্থাপনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে ১ কোটি উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি ২ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২০৪১ সালে পরিবেশবান্ধব শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত।