নিপা ফিরোজ : একজন সফল নারী উদ্যোক্তার গল্প
নিপা ফিরোজ মনে করেন, অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে তার এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে তাঁর ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিটিও দেয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, যে কোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।
ইন্টারনেটের বদৌলতে ক্লিক করলেই গোটা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোই। মুহুর্তেই পেয়ে যাবেন যখন যা দরকার! এ যেন সপ্নের রাজ্য। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ফেসবুক রয়েছে সবার শীর্ষে। তাছাড়া টুইটার, লিংক্ডইন, ইনস্টাগ্রামসহ রয়েছে আরো অনেক সোসিয়াল মিডিয়া। পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে নারীর সংখ্যাও কম নয় ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। মহামারি করোনার হ্রিংস্রতায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব, ঠিক সেই মুহুর্তে অর্থের চাকা সচল রাখতে এবং মহামারি করোনার বিস্তার রোধে বেড়েছে অনলাইন বিজনেস। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন বিজনেস পিছিয়ে নেই খুলনার মেয়েরা। খুলনা বিজনেস সোসাইটি নামে ফেইসবুক গ্রুপ। এখানে বিচরণ করতেই আপনি পেয়ে যাবেন হরেক রকম পন্যের সমাহার, এসব পণ্যের কারখানা এবং সেলার সিংহ ভাগই নারী উদ্যোক্তা।
একজন সফল নারী উদ্যোক্তার কথা আজ বলবো। একজন উদ্যোক্তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা উচিৎ, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নয় কথার মুহুর্তে এমনটা জানান দিয়ে তিনি নিজের অবস্থানটা তুলে ধরলেন নিপা। কিন্তু এই মুহর্তে আমাদের দেশে নারী তথা নারী উদ্যোক্তা ও নারী পেশাজীবিরা পুরষদের মতো নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ কোথায়? প্রশ্ন তিনি আগেই করে রাখলেন। তবে আমার মত এটা সমাজের সমস্যা হোক, দেশের সমস্যা হোক- এটা একটা সমস্যা। নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবেলা করতে হয় না হয়তবা।
নিপা ফিরোজ, একজন সংগ্রামী সফল নারী উদ্যোক্তা। ‘‘নিপা ‘স বেক’’ স্বত্ত্বাধিকারি নিপা ফিরোজ। খুলনা ফুলতলা উপজেলার খান জাহান আলী থানার আটরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মফস্বল গ্রামে তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আটরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খান জাহানআলী আর্দশ মহাবিদ্যালয় এবং সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি এ সময়ের একজন সফল হোমমেড ফুড আইটেমের আইকন। ‘নিপাস বেক’ হোমমেড ফুড আইটেমের তালিকায় যা পাবেন আপনি। জন্মদিনের কেক-ভ্যানিলা, চকলেট, ওভার লোটেড, মোকা কেক, লেমন কেক, অরেঞ্জ কেক, সেমি ফন্ডেন্ট কেক, ভ্যানিলা পেষ্টি, জার কেক চকলেট, জার কেক ভ্যানিলা ইত্যাদি এছাড়া রয়েছে, চিকেন প্যাটিস,পুডিং, ক্যারামেল পুডিং, শাহী জর্দা, চিকেন প্যাটিস, চিকেন বান। ফেসবুক লিংক ( Nipa Feroz Nipa | Facebook) এবং ফেসবুক গ্রুপ Nipa's Bake।
নিজস্ব আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ক্রেতাবলয়, অর্জন করেছেন আস্থা। শুরুটা স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ না হলেও গত চার বছরে তাঁর হোমমেড ফুড প্রতিষ্ঠান ,‘‘নিপা’স বেক’’ পেরিয়েছে অনেক বন্ধুর পথ। শৈশব থেকেই তার ইচ্ছা ছিলো একজন ফ্যাশান জিজাইনার হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার। পারিবারিক সর্মথন না পাওয়ায় হয়ে উঠেনি ফ্যাশান জিজাইনার। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। কিছু একটা করতে হবে বলে বেকে বসেছিলেন। রান্নাবান্নার শখ ছিল ছোটবেলা থেকেই। তবে তা ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে হবে চিন্তা করেননি।
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন তার স্বামী ও বড় বোন। উৎসাহ ও উদ্দিপনা দিয়েছেন পরিবারের সব থেকে আপনজন মা-বাবা এবং ছোট বোন। তারা সব সময় পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় তিনি এই জায়গায় আসতে পেরেছেন। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি সেই সাথে মন খারাপ করে চুপচাপ একা থাকতে ও জীবনের ভাল মূহুর্ত গুলো ভাবতে থাকেন। পছন্দের পাশা পাশি অপছন্দের তালিকাও রয়েছে নিপার। অপছন্দ করেন পর-নিন্দাকরা, অহংকার করা, মিথ্যা কথা বলা।
নিপা ফিরোজ মনে করেন, অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে তার এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে তাঁর ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিটিও দেয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, যে কোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নিপার পরামর্শ হলো স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। আমি একা বড় হতে চাই না; আশপাশের নারীদেরও সফল দেখতে চাই। সফল নারী উদ্যোক্তা নিপা ফিরোজ বলেন, জীবনে অনেক পেয়েছি। এবার কিছু দিতে চাই আমি সমাজের অবহেলিত মানুষদের। বিশেষ করে নারীরা যারা আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রে অসহায় তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে চাই, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মর্নিভরশীল করে গড়ে তুলতে চাই।
এগিয়ে যাক বাংলার অর্থনীতি, এগিয়ে যাক বাংলার নারীরা।