পরকীয়ায় স্বামী ৭ টুকরো: স্ত্রী ও ইমামের দায় স্বীকার
পরকীয়ার বলি হয়ে রাজধানীর দক্ষিণখান সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে গার্মেন্টসকর্মী আজহারুলের (৪০) সাত টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী ও মসজিদের ইমাম।
পরকীয়ার বলি হয়ে রাজধানীর দক্ষিণখান সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে গার্মেন্টসকর্মী আজহারুলের (৪০) সাত টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের স্ত্রী ও মসজিদের ইমাম।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া ওই নারীর নাম আসমা এবং মসজিদের ইমামের নাম আব্দুর রহমান। তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক অনুজ কুমার সরকার তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চালাকালীন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। একই সঙ্গে তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল আসমার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আব্দুর রহমানের জবানবন্দি গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমান। দুজনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জি আর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ২৬ মে দুই আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২৫ মে ইমাম আব্দুর রহমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম সাংবাদিকদের জানান, ইমামের কাছে মক্তবে পড়ত আজহারুলের চার বছরের ছেলে। সেই সুবাদে ছয় মাস ধরে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয় তাদের মধ্যে। এরই মধ্যে আজহারুলের স্ত্রীর প্রতি কুনজর পড়ে মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানের। এ নিয়ে গত ১৯ মে আজহার ও ইমামের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। আজহার ইমামকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ইমাম আব্দুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদের ভেতরে নিজের শয়নকক্ষ থেকে কোরবানির গরু জবাইয়ের ছুরি বের করে আজহারুলের গলায় চালিয়ে দেন। পরে তিনি লাশ গুম করার সুবিধার্থে আজহারুলের মরদেহকে ৭ টুকরো করেন।
গত ১৯ মে এশার নামাজের পর থেকে হত্যা মিশন শুরু করেন ইমাম আব্দুর রহমান। গলায় ছুরি চালানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তিনি আজহারুলকে আরও কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন। এরপর মরদেহকে টুকরো টুকরো করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। এশার নামাজের পর থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে এই হত্যা মিশন। লাশ ফেলে দেওয়ার পর তিনি নিজের কক্ষের এবং সেপটিক ট্যাংকের আশপাশের রক্তের দাগ পরিষ্কার করেন। মসজিদ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আজহারুলের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, মাওলানা আব্দুর রহমান সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ৩৩ বছর ধরে ইমামতি করে আসছেন।
আজহারুলের চার বছরের ছেলে মসজিদের মক্তবে পড়ত। আজহার নিজেও তার কাছে কুরআন শিখেছেন। এই সুবাদে আজহারের বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান। এ কারণে মসজিদের ইমামের সঙ্গে আজহারের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি আজহারুল অভিযোগ করেন তার স্ত্রীর সঙ্গে ইমাম অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এ নিয়ে কথা বলতেই ১৯ মে ইমামের কক্ষে গিয়েছিলেন তিনি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশ।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস