পিবিআই হেফাজতে বাবুল আক্তার
পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলার বাদী হিসেবে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতারের আইনি কোনো সুযোগ নেই।
পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলার বাদী হিসেবে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতারের আইনি কোনো সুযোগ নেই।
মঙ্গলবার (১১ মে) সকালে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে যান। সেখানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একটি টিম বিভিন্ন বিষয়ে জিজজ্ঞাসাবাদ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখছে পিবিআই।
পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের সঙ্গে তারা শুরু থেকে যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, সেটি অব্যাহত আছে।
বাবুলকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুযোগ নেই।’ তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ বা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বলতে পারছি না। হাইকোর্টের রুলিং আছে।’
মঙ্গলবার বিকেলে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘তিনি (বাবুল আক্তার) আগেও এসেছিলেন। আজকেও (মঙ্গলবার) পিবিআইতে গেছেন। মামলার বাদী হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাইকোর্টের রুলিং আছে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের বরাত দিয়ে সংস্থার সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে মামলা তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই।’
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রকৌশল নিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। আলোচিত এই মামলায় বাবুল আক্তারের জিজ্ঞাসাবাদের কথা নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।
বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে আর কোনো তথ্য জানানো সম্ভব নয় জানিয়ে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বাদী নিজেই চট্টগ্রামে গিয়েছেন।
মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমাও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে সোমবার পিবিআইয়ের ঢাকা অফিসে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন কর্মকর্তারা। মোশাররফ হোসেন মেয়ে হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ওই সময় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেন, তাঁর জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মিতু হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ অব্যাহতভাবে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে থাকেন। তবে পুলিশের তরফ থেকে কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। গোয়েন্দা বিভাগ মাত্র দুবার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বাদীর দিক থেকেও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে কোনো তাগাদা ছিল না।
শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।
মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তার প্রথমে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন। কিছু দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এনে প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
পরে পুলিশ জানায়, বাবুল চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। পরে বাবুল আক্তার দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে তিনি আবার আবেদন করেন। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাবুলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলো।’
বাবুল আক্তার পুলিশের চাকরি ছেড়ে প্রথমে আদ–দ্বীন হাসপাতালে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি চীন থেকে পানি পরিশোধনকারী যন্ত্র এনে বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন বলে তাঁর পরিচিতজনেরা জানিয়েছেন।