বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর এস/ই কালামের বিরুদ্ধে
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম এর বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বৈদ্যুতিক অংশের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম এর বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বৈদ্যুতিক অংশের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং দেয়ালে ফাটলসহ নানা ধরণের ত্রুটির বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি তার এই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৬ জুলাই ২০১১ থেকে ৩১ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত যে সকল কর্মকর্তারা উক্ত কাজের সাথে জড়িত ছিলেন তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম দুই দফায় এই নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বৈদ্যুতিক অংশের কাজে যুক্ত ছিলেন। প্রথম দফায় গনপূর্ত ই/এম বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে তিনি ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত এই কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গনপূর্ত ই/এম সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত আবারও এই কারাগারের বৈদ্যুতিক অংশের কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।
মূলত, ১৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং দেয়ালে ফাটলসহ নানা ধরণের ত্রুটির বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হবার পরে এই বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তে নামে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তদন্তে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পায় অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি।
এতো গেল এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম এর বিরুদ্ধে তার নিজ অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের তদন্তের ফলাফলের কথা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের কোন অন্ত নেই।
অভিযোগ রয়েছে, সংসদ ভবনের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় কাজের নামে নিজের শ্যালক দিয়ে সিন্ডিকেট করে ব্যবসা শুরু করেছেন গণপুর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম। সরকারি চাকুরী নীতির কোন তোয়াক্কা না করে আপন শ্যালককে দিয়ে বেশীরভাগ ঠিকাদারী কাজ করিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এক্ষত্রে তার অধীনস্থ প্রকৌশলীগণকে দিয়ে জোর করে ‘এপ্রুভড ইস্টিমেট’ তার শ্যালক সাইফুলের হাতে তুলে দেন তিনি। যা ইজিপি’র দরপত্রের নতুন জালিয়াতি।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, তার শ্যালকের নামে করা ‘ইন্ট্রিগেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস’ লাইসেন্স করে নিজেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম। শ্যালক-দুলাভাইয়ের কীর্তিকলাপ নিয়ে গত ৭ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের পক্ষে একটি অভিযোগও জমা দেওয়া হয়।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম ও তার আপন শ্যালক সাইফুল এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস’ এর হাতে জিম্মি হয়ে আছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই সার্কেল।
সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী নিজ পরিবারের সদস্য দিয়ে নিজ অধিক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম তা মানেননি। নিজ শ্যালক সাইফুলের মালিকানাধীন ‘ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস’ নামে খুলেছেন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার টেন্ডারের অনুমোদন করেছেন। সেই সাথে এই প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু টেন্ডারে মূল্যায়ন পর্যালোচক হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম নিজেই ছিলেন। গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কালামের অধীনস্ত কাঠের কারখানা বিভাগে ৮ কোটি, মেকানিক্যাল কারখানা বিভাগে ৪ কোটি, ই/এম বিভাগ-৭ এ ১২ কোটি এবং ই/এম বিভাগ-৮ এ ৬ কোটিসহ ৩০ কোটি টাকার অধিক কাজ রয়েছে তার আপন শ্যালক সাইফুলের প্রতিষ্ঠানের নামে।
নিজ কর্মক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলীদের উপর সাইফুলকে কাজ পাইয়ে দিতে চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও রাজস্ব বাজেটে ১২ লক্ষ টাকার প্রাক্কলন পাশ করার আইন থাকলেও বিপুল ঘুষের বিনিময়ে আবুল কালাম ১২ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে ২ কোটি টাকার প্রাক্কলন উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই তা পাশ করিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম এর বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ। কোন টেন্ডার তার কাছে গেলে তা বাতিল করার কথা বলে কিংবা পুন: টেন্ডার/পুনর্মূল্যায়নের কথা বলে ঠিকাদারদেরকে জিম্মি করেন তিনি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাইফুল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দুলাভাইয়ের কল্যাণে আজ প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার রয়েছে ব্রান্ড নিউ হ্যারিয়ার লেকসাস গাড়ি, বাড্ডাতে ৬তলা ভবন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে ৩ টি ৫ কাঠার প্লট। অন্যদিকে, গণপূর্ত ই/এম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম এর রয়েছে গুলশান নিকেতনে ৩ হাজার বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট, আফতাব নগরে ৫ কাঠার ৫টি প্লট, বনশ্রীতে ৫হাজার বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট, কুমিল্লার নবীনগরে ৪৫ একর জমি, এলিয়ন ব্রান্ডের নতুন গাড়ি ও বিপুল ব্যাংক ব্যালেন্স।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম এর মুঠোফোনে প্রকৌশল নিউজের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।