সাংবাদিক গ্রেপ্তারে 'শিক্ষকরা' ক্ষুব্ধ

সাংবাদিক গ্রেপ্তারে 'শিক্ষকরা' ক্ষুব্ধ

দৈনিক প্রথম আলো’র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করায় বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম ‘মিডিয়া এডুকেটরস নেটওয়ার্ক’ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দৈনিক প্রথম আলো’র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও পরবর্তী সময়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগসম্পর্কিত গণমাধ্যমের সংবাদে আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ, হতবাক, ব্যথিত ও মর্মাহত। আমরা একজন পেশাদার সাংবাদিকের সঙ্গে এ ধরনের অমানবিক ও অপেশাদারি আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

দীর্ঘদিন ধরে পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকতা করে আসছেন। ইতিপূর্বে তিনি বেশ কিছু অনুসন্ধানী সংবাদ করেছেন, যা দেশ, রাষ্ট্র ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক। সম্প্রতি তিনি স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন করেছেন। আমরা মনে করি, দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার যে কৌশল ও পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে, কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দুর্নীতি সেই অগ্রযাত্রাকে তীব্রভাবে ব্যাহত করছে। রোজিনা ইসলাম সেই সব অপরাধের সংবাদ প্রকাশ করে বরং সরকার, রাষ্ট্র ও জাতির সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

কিন্তু, অভিযোগ উঠেছে, ওইসব সংবাদে ক্ষুব্ধ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিশোধপরায়ন হয়ে সাংবাদিক রোজিনাকে সচিবালয়ে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন এবং তার অনুমতিবিহীন ছবি-ভিডিও তুলে সামাজিকভাবে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এতটুকু মানবিকতা প্রদর্শন করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে আরেক দফা হয়রানি করা হয়েছে। আমরা শিক্ষকসমাজ মনে করি, এ ধরনের আচরণ শুধু সাংবাদিকতার ওপরই তীব্র আঘাত নয়, বরং তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ঘটনা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সুশাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

অতএব, আমরা অতিদ্রুত রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি এবং মামলার প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকবৃন্দ:
অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. শেখ শফিউল ইসলাম, শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মাধব দীপ, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মামুন আ. কাইউম, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তাবিউর রহমান প্রধান, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, উজ্জ্বল কুমার মন্ডল, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাকিব আহমেদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ আদনান ফাহাদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজীব নন্দী, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এম মাহবুব আলম, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা), তপন মাহমুদ লিমন, শিক্ষক, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, শিক্ষক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সালমা আহমেদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সুমাইয়া শিফাত, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সারা মনামি হোসেন, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, মীর মো. ফজলে রাব্বি, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নিশাত পারভেজ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আমিনা খাতুন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উজ্জল তালুকদার, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, মোঃ রহমতুল্লাহ, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বিউটি ম-ল, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সহিবুর রহমান, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ফরহাদ উদ্দিন, শিক্ষক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মৃধা মোঃ শিবলী নোমান, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মোঃ সারোয়ার আহমাদ, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মৌসুমী খাতুন, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, মনিরা বেগম, শিক্ষক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাহদী আল মুহতাসিম, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শরীফুল ইসলাম, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শামিম হোসেন, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, অর্ণব বিশ্বাস, শিক্ষক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, মাহমুদুল হাসান, শিক্ষক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ফারজানা তাসনিম পিংকি, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রুমান শিকদার, শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ আবু রায়হান সিদ্দীকী, শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, মাজিদুল ইসলাম, শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রেজাউল করিম, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, আফতাব হোসেন, শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাশেদুল ইসলাম, শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মো. সাঈদ আল-জামান, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সালমা সাবিহা, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী এম. আনিছুল ইসলাম, শিক্ষক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস