সাংবাদিক রোজিনা : নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ডিআরইউ
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম আলো কিংবা তার পরিবার মামলা না করলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। পাশাপাশি এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য ডিআরইউয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম আলো কিংবা তার পরিবার মামলা না করলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। পাশাপাশি এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের জন্য ডিআরইউয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে।
শুক্রবার দুপুরে ডিআরইউ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশে এসব তথ্য জানান ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
মসিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সঙ্গে প্রথম আলো ও রোজিনা ইসলামের পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। তারা বাদি হয়ে মামলা করলে ভালো এবং আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আর তারা মামলা না করলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বাদি হয়ে এই ঘটনার বিচারের দাবিতে মামলা দায়ের করবে।’
মসিউর রহমান খান বলেন, ‘রোজিনা আপার মামলার শুনানি হয়ে গেছে, আগামী রোববার জামিন বিষয়ে আদেশ দেবে। জামিন পেলেই আমাদের এ আন্দোলন থেমে যাবে না। আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব। এই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং যারা রোজিনা ইসলামকে হয়রানি ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
‘সরকারের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির ব্যবস্থা না করে, সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে পৃথক কমিটি গঠন করা হবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য জনসম্মুখে প্রকাশ করব’ বলেও জানান ডিআরইউয়ের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘অনেক নেতাই গত তিন দিনে এখানে ছিলেন, আজকে অনেকে নেই। সামনে হয়তো আরও অনেক নেতা আসবেন। আমি আপনাদের কাছে কথা দিচ্ছি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যেই থাকুক, না-থাকুক, এই সংগঠনের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে, চলবে। তার জামিন এবং তার বিরুদ্ধে আনা মামলা প্রত্যাহার ও এই ঘটনার যৌক্তিক সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।
এদিকে আজকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে কর্মসূচির কথা থাকলেও তা করেনি ডিআরইউ।
এ বিষয়ে মসিউর রহমান খান বলেন, ‘আজকের কর্মসূচিতে আমরা কিছুটা পরিবর্তন করেছি। কারণ মুখে কালো কাপড় বাঁধা একটা চূড়ান্ত কর্মসূচি। সাংবাদিকদের অন্যান্য সংগঠনের কর্মসূচি ঘোষণার পর আলাপ হয়েছে। তারা শনিবার বৈঠক ডেকেছেন। যেখানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন যৌথভাবে বসবে। রোববার জামিন হলে কী হবে, নাহলে আমাদের অন্য কী কর্মসূচি নেয়া যায়, তারা আলাপ-আলোচনা করবেন। তাতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সেই বৈঠকে অংশ নেবে। তবে ওইদিন শেষ নয়। আমরা যদি মনে করি, ওই কর্মসূচিতে কোনো ধরনের আপসকামিতা আছে, সেক্ষেত্রে ডিআরইউ অবশ্যই আলাদাভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। কারণ আমরা এই আন্দোলনের যৌক্তিক সমাপ্তি চাই।’
ডিআরইউতে সরকারের একজন উপমন্ত্রীকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা গতকাল (বৃহস্পতিবার) একজন মন্ত্রীকে ডিআরইউতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আমলারা অন্যায় আচরণ করেছেন, সাংবাদিকরা এখানে একটা পক্ষ দাঁড়িয়েছে, আমলারা রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে ব্যবহার করে সাংবাদিকদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। তিনি কি আমলাদেরই মন্ত্রী, সাংবাদিকদের মন্ত্রী নন? সাংবাদিকদের জন্য কি তাদের দায়বদ্ধতা নেই? তাই ডিআরইউয়ের অবস্থান অবশ্যই যৌক্তিক। কারণ ওই মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিষোদগার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।’
রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে শনিবার কোনো কর্মসূচি থাকছে না বলেও জানান তিনি। সমাবেশে আরও ১০ জনের অধিক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেছেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যা করেছে, তা অন্যায়। অবিলম্বে তারা রোজিনা ইসলামের মুক্তি চান, তার বিরুদ্ধে আনা মামলার প্রত্যাহার চান এবং এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
এর আগে রোজিনা ইসলাম গত সোমবার দুপুরের পর পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে রাত ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদি হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী।
পরে পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে। একই সঙ্গে রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। ওই দিন শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করেন এবং রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তার পর বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়ালি জামিন শুনানি শেষে আগামী রোববার আদেশ দেওয়া হবে বলে জানায় আদালত।
প্রকৌশল নিউজ/