সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী গণতন্ত্র সুসংহত করে : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অত্যাধুনিক এবং শৃংখলাবদ্ধ সেনাবাহিনীর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখতে একটি সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্যই মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগে সদা প্রস্তুত, পেশাদার এবং দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যাস্ত করতে হবে।’

সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী গণতন্ত্র সুসংহত করে : শেখ হাসিনা

একটি অত্যাধুনিক এবং শৃংখলাবদ্ধ সেনাবাহিনীর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখতে একটি সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্যই মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগে সদা প্রস্তুত, পেশাদার এবং দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যাস্ত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে সেনাসদর মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০২১ (প্রথম পর্ব) এ প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় অংশগ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার সর্বদাই জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করে, শাসক হিসেবে নয়, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখতে একটি সুশৃঙ্খল ও অত্যাধুনিক সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

তিনি বলেন, ‘এ জন্যই মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগে সদা প্রস্তুত, পেশাদার এবং দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যাস্ত করতে হবে। শৃঙ্খলাই সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড। সেই সঙ্গে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সৎ, নির্মোহ, ন্যায়পরায়ণ, জনবান্ধব, মানবিক গুণসম্পন্ন এবং সর্বপরি কর্মজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানে সফল অফিসারদের খুঁজে বের করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য টিআরএসিই-ট্রেস (টার্বুলেটেড রেকর্ড এন্ড কম্পারেটিভ ইভাল্যুয়েশন) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা তাদের পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রকাশ করে।

এর সাথে নির্বাচকমন্ডলীগণ ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্র্ধ্বে উঠে, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিকেই পদোন্নতির জন্য নির্বাচিত করবেন বলে আমার বিশ্বাস, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদেরকে সকল প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রকার নিযুক্তি যেমন-কমান্ড, স্টাফ, প্রশিক্ষকসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ নিযুক্তির জন্য উপযুক্ত অফিসারদেরকে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। এতে সকলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সভায় স্বাগত ভাষণ দেন।

গত সাড়ে ১২ বছরে তাঁর সরকার তিন বাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, সেনা বিমান ও হেলিকপ্টারসহ আধুনিক ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, ইঞ্জিনিয়ারিং সরমঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধু প্রণিত প্রতিরক্ষা নীতির ভিত্তিতে নতুন করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছে, যা মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদন্ডে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে উল্লেখ করে করে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২,২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি।

করোনা মহামারীর সময়ও দেশে সকল মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সকল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছি, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রেরণ করেছি। দেশকে আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরিত করেছি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়েছে। রূপকল্প-২০২১ এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী ‘মুজিবশতবর্ষ’ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রেক্ষাপট টেনে এনে বলেন, সেখানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতিতে কাজ করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে অগ্রযত্রা শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এবং আমাদের সরকারের নিবিড় পরিচর্যার ফলে এই বাহিনী বর্তমানে অত্যন্ত পেশাদার, দক্ষ ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতিক কালের করোনা মহামারী প্রতিরোধসহ নানা উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলছে- যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

শুধু দেশেই নয়, আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্ব দরবার থেকে দেশের জন্য এক বিরল সম্মান ও মর্যাদা বয়ে এনেছে, যোগ করেন তিনি।

‘৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকার গঠন করেই আওয়ামী লীগ সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শীর্ষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং ১৯৯৮ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস্ সাপোর্ট অপারেশন ট্রেইনিং (বিপসট) এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (এএফএমসি) প্রতিষ্ঠা করি।

তাঁর সরকার সে সময় নতুন নতুন ব্রিগেড, ইউনিট ও ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান আরো বলেন, সেনাবাহিনীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি), আর্মার্ড রিকভারি ভেহিকেল (এআরভি), ব্যাটল ট্যাংক, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি ক্রয় করে।

তিনি বলেন, ২০০০ সালে আর্মি মেডিক্যাল কোরসহ অন্যান্য কোরে নারী অফিসার নিয়োগ শুরু করি। এছাড়া, ২০০০ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে গৃহীত ১৩২৫ নম্বর সিদ্ধান্তের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।

তাঁর সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এর সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩টি নতুন ফর্মেশনসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউনিট ও প্রতিষ্ঠান যুক্ত করেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের উল্লেখ করে জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল, উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন, তাঁর উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সেনানিবাসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি একটি বিশ্বমানের মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন জাতির পিতা এবং ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে তিনি সেই মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত জাতির পিতার ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন।

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক আজ বাংলাদেশের জনসাধারণ। এখন তোমাদের প্রতি আছে দেশ এবং জাতির প্রতি দায়িত্ব, জনগণের প্রতি দায়িত্ব, যে সমস্ত সৈনিকদের তোমরা আদেশ-উপদেশ দেবে-তাদের প্রতি দায়িত্ব এবং তোমাদের নিজেদের প্রতি দায়িত্ব। তোমরা সৎ পথে থাকবে, মাতৃভূমিকে ভালবাসবে। তোমরা হবে আমাদের জনগণের বাহিনী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ গঠনের জন্য মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। মাত্র নয় মাসেই তিনি একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন।

জাতির পিতা গণপরিষদে খসড়া সংবিধান অনুমোদনের সময় বলেছিলেন, ‘শাসনতন্ত্র ছাড়া, মৌলিক অধিকার ছাড়া দেশের অবস্থা হয় মাঝিহীন নৌকার মত।’ তিনি জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার শর্তে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতি উন্নয়নে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সেই সংবিধানের ২৫-নং অনুচ্ছেদে স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি রচনা করে দিয়েছেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই জাতির পিতা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তরিত করেছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ’৭১-এ পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, বিদেশে থাকায় তিনি এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। তাঁদেরকে পরবর্তী ৬ বছর রিফিউজির মত নির্বাসিত থাকতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছরের স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি।

জাতির পিতা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সারাটি জীবন সংগ্রাম করেছিলেন, আমরাও বিশ্বাস করি-গণতন্ত্রেই সর্বস্তরের মানুষের মুক্তি, কল্যাণ এবং দেশের উন্নতি, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীতে সারা বিশ্বে বিপর্যয় সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি থেমে নেই।

গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিতে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনাসহ বিভিন্ন দুযোর্গে গৃহহীন মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করে যাচিছ। আমরা সরকারে থাকলে কেউই গৃহহীন থাকবে না।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস