স্মৃতিবহ রক্তঝরা মার্চ

আজ থেকে শুরু হলো বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন ও বাংলাদেশ নামক ভুখণ্ডের ইতিহাস রচনার স্মৃতিবহ রক্তঝরা মার্চ। বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় ১৯৭১ সালের এই মাসেই। পরাধীনতা, শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার ও অনাচারের শৃংখল ছিন্ন করতে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ নামক জনপদে জ্বলে ওঠে স্বাধীনতার অনির্বাণ শিখা।

স্মৃতিবহ রক্তঝরা মার্চ

আজ থেকে শুরু হলো বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন ও বাংলাদেশ নামক ভুখণ্ডের ইতিহাস রচনার স্মৃতিবহ রক্তঝরা মার্চ। বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় ১৯৭১ সালের এই মাসেই। পরাধীনতা, শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার ও অনাচারের শৃংখল ছিন্ন করতে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ নামক জনপদে জ্বলে ওঠে স্বাধীনতার অনির্বাণ শিখা।

স্বাধীনতাকামী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল হয়ে ওঠেছিল ঢাকাসহ গোটা দেশ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বেই বাঙালির মনে ক্ষোভ, বিক্ষোভ দানা বাঁধলেও মার্চে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙক্ষা সাগরের উত্তাল উর্মিমালার মতো গর্জে উঠে।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বাঙালি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য প্রহর গুনছিল তখন সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে জাতীয় পরিষদের পূর্ব নির্ধারিত ৩ মার্চের অধিবেশন বাতিল করেন।

এই ঘোষণায় পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ঢাকা পরিণত হয় বিক্ষোভের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৫ দিন হরতাল এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার পাশে এসে দাঁড়ান মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, কল, কারখানা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে দেশ। সামরিক সরকার কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলতে তৎপরতা চালায়। কিন্তু আপামর জনসাধারণের আন্দোলনের মুখে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ মুখ থুবড়ে পড়ে। এর ফলে বাঙালির স্বাধীনতা আদায়ের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দিন দিন তীব্র হয়ে ওঠে।

২ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বহুল ঘটনা আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে স্মরণীয় হয়ে আছে। ২ মার্চ হরতাল চলাকালে কলাভবনের সামনে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয় পল্টন ময়দানে এবং ঐ দিনেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় সমবেত কণ্ঠে। মার্চের ৪ তারিখ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়। সারাদেশে সরকারি পুলিশ বাহিনীর সাথে সাধারণ জনগণের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়, চট্রগ্রামে ২দিনে ১২০ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত হয়। খুলনায় সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ২২ জন আহত এবং ৬ জন নিহত হয়। এ রকমভাবে দেশের সব প্রান্তেই মুক্তিকামী জনগণের সাথে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের কারণেই দেশব্যাপী জনগণ বঙ্গবন্ধু আহুত হরতালকে সর্বাত্নকভাবে পালন করতে থাকে।

অবশেষে এলো ৭ মার্চ, সেদিন ছিল রোববার। বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো মানুষের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।১৮ মিনিটের এক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালির মুক্তির সনদ তুলে দিলেন আমজনতার হাতে। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিকামী জনতার যে ঢল নেমেছিল তা ছিল অগ্নিগর্ভ।

এভাবেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো বাংলায়। এ আন্দোলন দমানোর জন্য ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদাররা বর্বর কায়দায় কাপুরুষের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ বাঙালিদের ওপর। দুষ্কৃতিকারীরা ষড়যন্ত্র করে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ দেশের প্রথিতযশা নাগরিকদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। তারপরেও তারা বাঙ্গালিকে, বাঙ্গালির সত্ত্বাকে কোনভাবেই ধ্বংস করতে পারেনি। সংগ্রামী চেতনায় আলোড়িত বাঙালি তখন চুপ থাকেনি। বেছে নিয়েছিল সংগ্রামের পথ, মুক্তির পথ।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বারংবার শুনতে শুনতে উদ্বেলিত হতেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করত বঙ্গবন্ধুর হৃদয়নিংড়ানো ভাষণ। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার যে অনুপ্রেরণা তিনি শিখিয়েছিলেন বাংলার মায়েরাও তা থেকে উদ্বেলিত হয়েছিলেন।

এরপর দীর্ঘ ৯ মাস মৃত্যুর ভয়কে জয় করে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলার সুর্য সন্তানরা। বীর বাঙালি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে লাল সবুজের পতাকা আর অক্ষয় মানচিত্র। স্বাধীনতা দিবস হিসেবে অর্জিত হয় ২৬ মার্চ।

প্রকৌশল নিউজ/এস