সড়ক অবরোধ : তারিখ নয় বেতন ভাতা চায় শ্রমিকেরা
বকেয়া বেতনের দাবীতে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের লক্ষীপুরা এলাকায় অবরোধ করেছে শ্রমিকেরা। সকাল আনুমাণিক ১০টা থেকে স্থানীয় স্টাইল ক্রাফট লিমিটেডের শ্রমিকেরা এ অবরোধ সৃষ্টি করে।
বকেয়া বেতনের দাবীতে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের লক্ষীপুরা এলাকায় অবরোধ করেছে শ্রমিকেরা। সকাল আনুমাণিক ১০টা থেকে স্থানীয় স্টাইল ক্রাফট লিমিটেডের শ্রমিকেরা এ অবরোধ সৃষ্টি করে।
শ্রমিকদের এ বিক্ষোভটি চলমান। আগেও একই দাবীতে তাদের বিক্ষোভ চলে অসছিল। মঙ্গলবার একই স্থানে দুই ঘন্টা অবরোধের পর রাত আটটা পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাতের জন্য কারখানার সামনে অপেক্ষা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে রাতে তারা ফিরে যায়। এবার নতুন কোনো তারিখ বা প্রতিশ্রুতি নয় বেতন-ভাতা চায় শ্রমিকেরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সকাল আটটায় কারখানায় এসে কাজে যোগদান না করে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কে চলাচল করা সকল প্রকার যানবাহন দুই দিকে আটকা পড়ে। এসবের মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যাই বেশি।
কারখানার সুইং শাখার শ্রমিক চামেলী, খাদিজাসহ অন্যরা জানান, নতুন কোনো তারিখ বা প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন নেই আমাদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে ৭শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা চলতি বছরের মার্চ, মে, জুন এবং ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নভেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটি ও ২ বছরের ঈদ বোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাওনা গত মার্চ মাসের বকেয়া বেতন ৭ জুলাই এবং মে ও জুন মাসের বকেয়া বেতন ১৫ জুলাই ও ঈদবোনাস ১৮ জুলাই পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে তারিখ ধার্য্য করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু মালিকপক্ষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭ জুলাই কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করে তিন মাসের বকেয়া পাওনা একত্রে ১৫ জুলাই পরিশোধের ঘোষণা দেয়। এতে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। গত ঈদুল ফিতরের সময়ও আন্দোলন করে তাদের বেতন বোনাস নিতে হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, বুধবার বেতন ভাতার দাবীতে সকাল ১০ টা থেকে সড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের পাওনা টাকা দিতে হবে। এছাড়া আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। অনেকবার মালিকপক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয় নি। শ্রমিকদের টাকা দেওয়া ছাড়া বোঝানোর আর কোনো পথ নেই। তাছাড়া শ্রমিকেরা রাত পর্যন্ত কারখানা মালিকের জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে ফিরে গেছে। বুধবার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়েছে। এখনও মালিকপক্ষের কেউ শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে আসেনি।
কারখানার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক জানান, শ্রমিকদের রোজার ঈদের আগে এপ্রিল মাসের ১৯ দিনের বেতন এবং ঈদ বোনাস দেয়া হয়েছে। এখন শুধু এপ্রিলের ১১দিন এবং মে-জুন মাসের বেতন তারা পাবে। গত ১০ জুলাই শনিবার শ্রমিকদের নিয়ে কারখানার এমডি ভার্চুায়ালি মিটিং করেছেন। মিটিংয়ে করোনাকালীন বন্ধের প্রথম ৪৫দিনের ৫০ শতাংশ এবং পরের দিনগুলোর ২৫ শতাংশ বেতন দেয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু শ্রমিকরা সিদ্ধান্তটি না মেনে বিক্ষোভ করছে। বিষয়টি নিয়ে কলকারখানা অধিদপ্তর এবং ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।