৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২ গৃহহীনকে ঘর দেবে সরকার

৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেবে সরকার। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে গৃহহীন মানুষকে এসব ঘর দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ লক্ষ্যে (একনেক) ‘আশ্রয়ন-২’ প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধনী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করেছে।

৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২ গৃহহীনকে ঘর দেবে সরকার

৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি  ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেবে সরকার। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে গৃহহীন মানুষকে এসব ঘর দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ লক্ষ্যে (একনেক) ‘আশ্রয়ন-২’ প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধনী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন করেছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুুয়ালি সভায় যুক্ত হোন। বৈঠকশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের। এরই আলোকে ‘আশ্রয়ণ-২ (৪র্থ সংশোধিত)’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের পাকা ঘর পাবে। যার মূল্য আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ টাকা। মান্নান বলেন, দেশে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগীদের দারিদ্র বিমোচন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা হবে প্রকল্পের মাধ্যমে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরপর প্রথম সংশোধিত ব্যয় ২ হাজার ২০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তৃতীয় সংশোধিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।কাজের পরিধি বাড়ার ফলে চতুর্থ সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ফলে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২ মানুষকে পাকা বাড়ি দিতে সরকার আরও ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর জুন ২০২৩ মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান,  মঙ্গলবার একনেকে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ২১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১০ হাজার ৭১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ৪৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

‘আশ্রয়ণ-২ (৪র্থ সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, ৪ হাজার ৩৯৩টি সেমি পাকা ব্যারাক ও ৬০টি বহুতল ভবন নির্মাণ হবে। ১ হাজার ১২০টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ৫৬৫টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লোপ প্রোটেকশন নির্মাণ করা হবে। সব প্রকল্প গ্রামে অগভীর-গভীর নলকূপ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাও থাকবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ঢাকার পাশাপাশি আগামীতে চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে তার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় সংশ্লিষ্টরা উপস্থাপন করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, চলতি বছরেই পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও আড়াই শতাংশ বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে জুনে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে চালু হবে। অন্যদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে চালু হবে মেট্রোরেল। কেবল পদ্মা সেতু চালু হলেই ১ দশমিক ২ শতাংশ অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধি বাড়বে। মেট্রোরেল নিয়ে এখনও প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ হয়নি। এটা চালু হলে পণ্য পরিবহন বাড়বে। সব মিলিয়ে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।

একনেকে ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে এয়ারপোর্ট রোড সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন ও নগরবাসীর জীবন-যাত্রার মানোন্নয়ন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুযোগ বৃদ্ধি এবং  নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিকস্ ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস গড়ে তোলা (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প,  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রিয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (১ম পর্যায়) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের  ‘মোবাইল গেইম এ এ্যাপ্লিকেশন  এর দক্ষতা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প,  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই-১ম পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প,  পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দু’টি প্রকল্প যথাক্রমে  ‘বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪টি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙ্গন হতে প্রতিরক্ষা’ প্রকল্প এবং ‘কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রক্ষপুত্র নদের ডানতীর ভাঙ্গনরোধ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। সুত্র-বাসস।