জীবন-জীবিকা উন্নয়নে বাজেট চায় সিপিডি
করোনাভাইরাসের মহামারির এই কঠিন সময়ে নতুন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব না দিয়ে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অনুরোধ জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ(সিপিডি)। এর পাশাপাশি কর আরোপ না করে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বন্ধ করতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেছে সংস্থাটি।
করোনাভাইরাসের মহামারির এই কঠিন সময়ে নতুন বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব না দিয়ে জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অনুরোধ জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ(সিপিডি)। এর পাশাপাশি কর আরোপ না করে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বন্ধ করতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেছে সংস্থাটি।
সিপিডি বলেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নীতিপরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির চিন্তা থেকে বেরিয়ে বৈষম্য রোধ ও সুষম বণ্টনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সোমবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে প্রতি বছরের মতো নতুন বাজেটকে সামনে রেখে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এতে বক্তব্য দেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
প্রবন্ধে বলা হয়, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন চিত্র হতাশাজনক। ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) হয়েছে ৪২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। এই ১০ মাসে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য খাতের এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ৩১ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যক্তি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যেখানে ১৫ শতাংশ, প্রথম ৮ মাসে তা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সম্প্রসারণমূলক বা বড় বাজেট করার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, জিডিপির তুলনায় ঋণ এখনও ৩২ থেকে ৩৩ শতাংশের ঘরে রয়েছে। এখনও ঋণ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। কৃষি খাতে মূল্য কমিশন ও ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশও করেছে সিপিডি।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, মূল্য কমিশন থাকলে কৃষকেরা সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, ন্যায্যমূল্যও পাবেন। এ কমিশন থাকলে কোনো সময়ে কী নিত্যপণ্য আমদানি করতে হবে, তার পরামর্শ পাওয়া যেত।
আর ব্যাংক কমিশন করার বহুদিনের সুপারিশ সিপিডির। সরকার একবার উদ্যোগ নিয়েও আবার পিছিয়ে গেছে। এটা দরকার। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, খেলাপি ঋণের যা চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা যে স্বচ্ছ ছবি নয়, এমনটা বলা যায়। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে বলেও সিপিডির কাছে ধরা পড়েছে।
প্রণোদনা বাস্তবায়নে বহুপাক্ষিক টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। বলেছে, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নতুন বাজেট করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমান কর কাঠামোতে নতুন কর আরোপ করা বা উচ্চ কর আরোপের সুযোগ নেই। তবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। এ জন্য কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। অর্থপাচার রোধ করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা, কর্মসংস্থানমুখী কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার, বিশেষ করে চলমান গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের প্রস্তুতি দরকার। সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থ ব্যয় করেও প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন হবে না।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ সময়ে নতুন কর আরোপ করা কঠিন। কিন্তু বাজেট তো করতে হবে। অর্থের দরকার। ফলে এখন দরকার হচ্ছে কর ফাঁকি বন্ধ করা এবং অর্থ পাচার বন্ধের দিকে নজর দেয়া। আর এ কাজটি এবার বেশ শক্তভাবে করতে হবে।’
নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার বলছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দ থাকে। বাস্তবে এটা দেড় শতাংশ হবে। সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে পেনশনসহ আরও অনেক বিষয় রয়েছে, সেগুলো সরাসরি দরিদ্র মানুষের সাথে সম্পর্কিত নয়। এসব বাদ দিলে প্রকৃত সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ দাঁড়ায় জিডিপির দেড় শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গড়ে ৪ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা দরকার। এটা থাকলে নতুন করে যারা দরিদ্র তাদের সুরক্ষা দেয়া সহজ হতো। এ জন্য এ খাতে কমপক্ষে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
‘দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ নেই। এগুলো আগে বন্ধ করতে হবে। মধ্য মেয়াদে সংস্কার কর্মসূচি নিতে হবে। নতুবা বরাদ্দ করা অর্থের অপচয় হবে, দিনের শেষে মানুষের উপকার হবে না।’
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বাজেট বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘মধ্য মেয়াদি সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জায়গা ছিল, বাজেট বাড়ানোর সঙ্গে সেখানে সমানভাবে হাত দেয়া হয়নি। সরকারি ব্যয় (রাজস্ব ও উন্নয়ন) জিডিপির ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ। পাকিস্তান, ভারত, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম। বাস্তবায়ন সক্ষমতা অর্জনের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না।
‘করোনার মতো সংকট যখন আসে, তখন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। প্রয়োজনীয় ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। দরিদ্রদের (শহর ও শহরতলিসহ) হালনাগাদ তালিকা জরুরি।’
গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যেকোনো সংস্কারের বিষয় এলেই সরকারের মধ্যে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।