বিভীষিকার টুয়েন্টি টুয়েন্টি

একটা বছর প্রতিটি মানুষের জীবনে নানা স্বপ্ন নিয়ে আসে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পৃথিবীবাসীরে কত না আয়োজন থাকে? সারাবছর জুড়ে কি কি করবেন তারও একটা লিস্ট মনে মনে লিখে রাখেন বেশিরভাগ মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে নানা পরিকল্পনা থাকে সবার মাঝে। নতুন সন্তানের জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু এসব ঘিরে মানুষের কতই না আবদার আহ্লাদ থাকে! এমনসব আসা নিয়ে শুরু হয়েছিল টুয়েন্টি টুয়েন্টি। কিন্তু বছরের শুরুতে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনা ভাইরাস সব স্বপ্ন যেন ফিকে করে একাই রাজত্ব কায়েম করেছে ভূ-মন্ডল জুড়ে। এর শেষ কোথায় তা কেউ বলতে না পারলেও আসছে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান আবারো আসছে আসার বারতা নিয়ে। কারণ ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই প্রয়োগ শুরু হয়েছে মানবদেহে।

বিভীষিকার টুয়েন্টি টুয়েন্টি

একটা বছর প্রতিটি মানুষের জীবনে নানা স্বপ্ন নিয়ে আসে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পৃথিবীবাসীর কত না আয়োজন থাকে? সারাবছর জুড়ে কি কি করবেন তারও একটা লিস্ট মনে মনে লিখে রাখেন বেশিরভাগ মানুষ। পরিবার পরিজন নিয়ে নানা পরিকল্পনা থাকে সবার মাঝে। নতুন সন্তানের জন্ম, বিয়ে, মৃত্যু এসব ঘিরে মানুষের কতই না আবদার আহ্লাদ থাকে! এমনসব আসা নিয়ে শুরু হয়েছিল টুয়েন্টি টুয়েন্টি। কিন্তু বছরের শুরুতে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনা ভাইরাস সব স্বপ্ন যেন ফিকে করে একাই রাজত্ব কায়েম করেছে ভূ-মন্ডল জুড়ে। এর শেষ কোথায় তা কেউ বলতে না পারলেও টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান  আসছে আসার বারতা নিয়ে। কারণ ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই প্রয়োগ শুরু হয়েছে মানবদেহে। 

টুয়েন্টি টুয়েন্টি ছিল শুধু মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ধনী থেকে রাস্তার ফকির সবারই এক কথা, বেঁচে থাকলে আসছে বছর সবকিছুই হবে। প্রতিটি বছরই মানুষকে নতুন কিছু ঘটনা এবং নতুন কিছু শব্দের সাথে আরো বেশি পরিচিত করে দেয়। প্রকৌশলনিউজের এই আয়োজনে চেস্টা কি শিখলাম আর কি পেলাম টুয়েন্টি টুয়েন্টিতে। 

করোনা
কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে নতুন একটি শব্দ নাম তার করোনা মহামারি। সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে এই শব্দটিই সবথেকে বেশি খুজেছেন বিশ্বাবাসী। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বন্ধু আরেক বন্ধুকে প্যাচে ফেললে তাকে বলছে করোনা। রাস্তা থেকে আকশচুম্বি অট্টালিকায় কোনো জায়গায় পৌছতে বাকি নেই করোনা শব্দ এবং ভাইরাসটি। 

মাস্ক ব্যবহার 
হাসপাতালে অপারেশন করার সময় সাধারণত চিকিৎসকদের মাস্ক পরতে দেখা যেত। কিন্তু এই টুয়েন্টি টুয়েন্টিতে করোনা আসার পর বিশ্বের সব মানুষের জন্যই বাধ্যতামূলক হয়ে যায় মাস্ক। করোনা ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার করা হয়, মাস্ক নিয়ে এখনো চলছে গবেষণা, আজকাল ফ্যাশনেরও অংশ করা হয়েছে মাস্ককে। সার্জিক্যাল মাস্ক বা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা হলেও, দু’একজন সোনা-রুপার মাস্কও তৈরি করেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। 

হাত ধোয়া 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হাত ধোয়ার ওপর জোর দিয়েছে বহুবার। কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ দেয়নি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে। তবে হাত ধুয়ে নিজেদের জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা আগের চেয়ে অনেক-অনেক বেড়ে গেছে এবছর। সাবানের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি যোগ হয়েছে স্যানিটাইজারের ব্যবহারও। গ্রামীণ মানুষও এখন বাইরে থেকে এসে হাত ধুয়ে নিজেকে সুরক্ষিত করার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। 
   
কোয়ারেন্টাইন 
একেবারেই নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে কোয়ারেন্টাইন শব্দটি। কেউ কোথাও গিয়ে সরাসরি বাইরে ভ্রমণের সুযোগ বন্ধ-আগে ১৪ দিন ঘরবন্দি থেকে তারপর বাইরে ঘোরাঘুরি। এই ১৪ দিন ঘরবন্দি সময়কেই বলা হয় কোয়ারেন্টাইন।
  
আইসোলেশন 
করোনার শুরুর দিকে সবচেয়ে ভয়াবহ শব্দ হয়ে দাঁড়ায় আইসোলেশন। কারো মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাকে সবার থেকে আলাদা করে রাখা হয়। রোগের কষ্টের চেয়ে সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে একা থাকার মানসিক চাপ যেন তীব্র কষ্টের কারণ হয়। এদিকে পরিবার আর বন্ধুদের উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না, যখন প্রিয়জন থাকেন আইসোলেশনে।  

সামাজিক দূরত্ব 
মহামারি করোনায় ২০২০ শিখিয়ে দিয়েছে কীভাবে সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বারবারই বলা হয়েছে অন্যজনের সঙ্গে অন্তত তিন থেকে ছয় ফিট দূরত্ব রাখতে। অবশ্য এই দূরত্ব ছিল শুধুই শারীরিক, অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ আর মানসিকভাবে আমরা দূরে থেকেও পাশে থেকেছি প্রিয়জনের।   
 
লকডাউন 
শুধুমাত্র হাসপাতাল ছাড়া আর কিছুই যেন খোলা হয়নি সারাদিন, রাস্তায় ছিল না কোনো গাড়ির শব্দ, গাছের একটি পাতাও যেন পড়তে দু’বার ভাবছে, এমনই নীরবতা নেমে আসে পুরো বিশ্বে। চিরচেনা সেই লোকের ভিড় ছিল না কোথাও। বনের পশু নেমে পড়েছিল রাস্তায়। ওরা যেন মানুষের ঘরবন্দি জীবনও নিজ চোখে দেখে গেছে ইউরোপ থেকে আফ্রিকা এমনকি এশিয়া মহাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে। সেটা নিয়ে আবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সংবাদ করে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে।   

করোনা টেস্ট-পজিটিভ-নেগেটিভ 
জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টসহ যে কোনো করোনার উপসর্গ বা করোনা রোগীর কাছাকাছি যারা ছিলেন, তাদের  করোনা টেস্ট করা হয়। যাদের করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসে তাদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলতে হয়েছে। শুরুর দিকে করোনা পজিটিভ হওয়া মানে তার ও তার পরিবারের সবার জীবনেই যেন অভিশাপ নেমে আসে। পেয়ে বসে আতঙ্কে। তবে পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য  গড়ে ওঠে বিশেষায়িত হাসপাতাল। চিকিৎসকদের দেওয়া হয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পিপিই (বিশেষ পোশাক, করোনার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে না) ধীরে ধীরে মানুষের আতঙ্কও কমে যায়। করোনা পজিটিভ এলে, ১৪ দিন আইসোলেশনে থেকে তারপর আবার পরীক্ষা করাতে হয়। করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি। ফিরতে পারেন সবার মাঝে স্বাভাবিক জীবনে। এ যেন মরার আগে আরেকবার মরার মত অবস্থা।  

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 
প্রায় সারা বছর স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ, শিশুদের নতুন স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন তুলে রেখেছে তাদের অভিভাবকরা। আগে তো জীবন, তারপর সব কিছু। দৌড়ে ক্লাসে যাওয়া বা বন্ধুর সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার পরিবর্তে এবছর অনলাইনে ক্লাস করেছে ছোট ছোট সোনামনিরা।   

খেলাধুলা 
ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিসের জমজমাট আসরগুলো যেন চলে যায় হিম ঘরে। পিছিয়ে যায় টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপও।  

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পৃথিবী 
এমন পৃথিবীর কল্পনাও কেউ করেনি। যেখানে একটি বিমানবন্দরে প্রতি মিনিটে নানা দেশের প্লেন আসে-যায়, সেখানে মাসেও একটি প্লেন ওড়েনি। বন্দরগুলোতে ছিল না জাহাজে পণ্য তোলা আর খালাসের ব্যস্ততা। থেমে যায় রাত দিনের কাজের চঞ্চলতা। বন্ধ হয়ে যায় এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যাওয়া আসা। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখা হয় বিশ্বজুড়ে।  

দেশি পণ্য, ঘরের খাবার 
বাইরে যাওয়া কমে গেল, প্রায় বন্ধ হলো বাইরে খাওয়া। তার পরিবর্তে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার। আর হোটেলের খাবারের জায়গা দখল করে নেয় অনেক ঘরে তৈরি করা খাবারের উদ্যোগগুলো। একইভাবে বাইরের দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিদেশ থেকে পোশাক কসমেটিকস আসাও প্রায় বন্ধ ছিল। আগে আসা পণ্যগুলোও পাওয়া যাচ্ছিল না, কয়েকগুন দামেও। এই সুযোগে দেশি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেন সবার প্রয়োজন মেটাতে। আর ছোট ছোট এই উদ্যোক্তাদের পরিচিতি এনে দিতে কাজ করে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর মতো প্লাটফর্মগুলো।  

ভ্যাকসিন 
পুরো একটা বছরে আট কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় মহামারি করোনায়, মৃত্যু হয়েছে ১৭ লাখের বেশি মানুষের। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ। এই ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনেছে। কবে পাওয়া যাবে সেই কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন বা টিকা। আর করোনার ভয়াবহ মৃত্যু আতঙ্ক থেকে মুক্ত হবে বিশ্ববাসী। বিশ্বের নাম করা সব গবেষকরা রাত-দিন এক করে চেষ্টা চালিয়েছেন, করোনা রুখতে কাজ করবে এমন টিকা আবিষ্কারের। শেষ পর্যন্ত নিরাশ করেননি গবেষকরা। রাশিয়ায় প্রথম টিকা আবিষ্কার হয় এবছরই। আর এরই মধ্যে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সাধারণ নাগরিকরাও করোনার ভ্যাকসিন পেতে শুরু করেছে।  

স্টিমইয়ার্ড,জুম

মানুষ যখন ঘরবন্দি হয়ে পড়লো তখন ডিজিটাল প্লাটফর্মই হয়ে পড়লো একমাত্র উপায় যোগাযোগর। পরিবারের  সবার সাথে যোগাযোগ, সরকারি বেসরকারি অফিসিয়াল মিটিং এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগে নতুন মাত্র এনে দিল স্টিমইয়ার্ড এবং জুমের মত প্লাটফর্ম। ঘরে বসে মানুষের জন্য কাজ করা এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেতে জুনিয়রদের ভরসা এখন এই প্ল্যাটফর্মগুলো। 


টুয়েন্টি টুয়েন্টির বর্ণনায় শুধু করোনা আর করোনা। তবে এই টুয়েন্টি টুয়েন্টিতে দাঁড়িয়েই স্বপ্ন আমাদের টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান বা ২০২১ এ করোনামুক্ত নতুন ভোরের।