বহুমাত্রিক সংকটে প্রবাসীরা

বহুমাত্রিক সংকটে প্রবাসীরা
প্রবাসী

প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে বছর দুয়েক আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন ফরিদপুরের যুবক বাবুল মিয়া । একই সময়ে সিরাজগঞ্জের মাইদুল ইসলাম গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশ ভিন্ন হলেও দুজনেই পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর আশা করেছিলেন। আশার আলোও দেখছিলেন তারা। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দুজনকেই দেশে চলে আসতে হয়। 

এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ কয়েকদিন আগে যখন তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, বারাবার বলছিলেন কীভাবে পরিবার নিয়ে সামনের দিনগুলোতে চলবেন সেই দুশ্চিন্তায় আছেন। করোনার কারনে দেশে ফিরে আসা অধিকাংশ শ্রমিকের গল্প প্রায় একই।  তারা জানেন না পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, আবার কবে তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন বা আদৗ পারবেন কী না জানেন না। নিয়োগকর্তারাও সুষ্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।  

দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা যেখানে ফের বিদেশে যাওয়ার চিন্তায় মগ্ন, তখন বিদেশে থাকা প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন বহুমাত্রিক সংকটে। অনেকেরই সেখানে কাজ নেই। আর যার কাজ আছে তাদের মধ্যে অনেকের বেতন বন্ধ। দেশে আসার টাকাও নেই।  কীভাবে নিজের খরচ চালাবেন, কীভাবেই বা পরিবারকেই টাকা পাঠাবেন সেই চিন্তায় আছেন তারা। হঠাৎ আসা করোনা ভাইরাস কোটি বাংলাদেশি প্রবাসীর জীবনকে অনিশ্চতায় ফেলে দিয়েছে। 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি।  বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পযর্ন্ত এক কোটিরও বেশি বাংলদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন। তারা সবমিলিয়ে দুই লাখ ১৭ হাজার মিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। তবে করোনার কারণে পুরো অভিবাসন খাতটা সংকটে পড়েছে। 

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২০ লাখ বাংলাদেশি। আরব আমিরাতে আছেন অন্তত ১৫ লাখ। এছাড়া কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনের গড়ে তিন থেকে চার লাখ বাংলাদেশি আছেন। একে তো করোনা তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম একেবারেই কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। ওদিকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশিরাও একইভাবে নানা সংকটে। 

এই সংকটের কারণ কী? বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের যতো লোক বিদেশে যায়, তাদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলীর বা পেশাদার লোকের সংখ্যা মাত্র দুই শতাংশ। এরা মাস গেলে বেতন পান, ফলে খুব দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বাকি যারা আছেন তারা অদক্ষ বা আধাদক্ষ। তাদের বেতন হয় কাজের ওপর। নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্ন কর্মী বা ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা। করোনা ও লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ থাকায়  তারা আছেন সংকটে। এছাড়া যারা ছোটবড় ব্যবসাবাণিজ্য করতেন, তাদেরও ব্যবসা ক্ষতির মুখে। আর যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের সংকটের তো শেষ নেই৷

করোনার এই সময়ে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা অনেক না হলেও এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেশে ফেরা নারীরা নানা সংকটে আছেন।