২৫ কৃষকের মৃত্যুর পর নড়ে বসলেন মোদী
ভারতে চলমান তিন সপ্তাহ ধরে কৃষকদের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী নয়াদিল্লির সীমান্ত এলাকায় অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন তারা। গেল তিন সপ্তাহে তীব্র ঠাণ্ডাসহ নানা কারণে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় সুর নরম করে বিক্ষোভরত কৃষকদের আবারও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি আইন পাস করে সরকার। ২৬ নভেম্বর আইন বাতিল দাবিতে আন্দোলনে নামেন লাখ লাখ কৃষক। শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) আল জাজিরাকে উত্তরাঞ্চলীয় হরিয়ানা রাজ্য পুলিশের মহাপরিচলক মানোজ ইয়াদভ বলেন, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ২৫ জন মারা গেছেন। দু’দিন আগে একজন আত্মহত্যা করেন। ১৪ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাকি অধিকাংশই ঠাণ্ডা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পাঞ্জাব এবং দিল্লি থেকে বিক্ষোভে অংশ নিতে আসার সময় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
কৃষক আন্দোলনের নেতা দারশান পাল আল জাজিরাকে বলেন, মৃতের সংখ্যা অন্তত ৩৫। কালো কৃষি আইনের প্রতিবাদ করে তারা জীবন দিয়েছেন। নতুন আইনে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বড় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
সর্বভারতীয় কৃষাণ সংগ্রামের সমন্বয় কমিটির মুখপাত্র আশুতোষ মিশ্রা বলেন, বিক্ষোভে অংশ নিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫ কৃষক নিহত হয়েছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কৃষকদের অধিকাংশের বয়স ৬০ বা তার বেশি। ট্রাক্টর এবং ট্রেইলার পাশাপাশি রেখে তীব্র শীত উপক্ষা করে উত্তর ভারতের ক্যাম্পে এবং বাইরে বিক্ষোভ করছেন তারা।
মিশ্রা বলেন, ভারতের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীত পড়ছে। দিনের বেলায় তাপমাত্রা তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রাতের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক।
মোদি কৃষকদের দাবি, নতুন আইন কৃষিপণ্যের দাম, মজুত এবং বিপণন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে। এমন দাবি তুলে নভেম্বরের শেষ দিক থেকে লাখ লাখ কৃষক নয়াদিল্লির বিভিন্ন প্রবেশ মুখে অবস্থান করছেন। অধিকাংশ কৃষক পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা।
কৃষকদের শঙ্কা, নতুন আইনে সরকার আর কৃষকদের থেকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য ক্রয় করবে না। অবশেষে বেসরকারি কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে পুরো কৃষিখাত।
কৃষি আইন ঘিরে অচলাবস্থা নিরসনে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। সব আলোচনাই ব্যর্থ হয়। তারপরও শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি তার সরকারের কৃষি আইনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। আন্দোলনরত কৃষকদের আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দফায় দফায় মোদির মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর কৃষকদের অবস্থান, সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় কোনো ফল আসবে না। আইন তিনটি বাতিলই সমাধানের একমাত্র পথ।
ভারতের সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদন হয় মধ্যপ্রদেশে। রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে শুক্রবার অনলাইনে মতবিনিময় করেন মোদি। বক্তব্যে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলেন জানান। পণ্যের মূল্যের বিষয়েও তাদের নিশ্চয়তা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
‘বড় বড় দেশের কৃষকরা যেসব আধুনিক সুযোগ সুবিধা পায়, সে সুবিধা ভারতের কৃষকরাও পাবে। সেদিন বেশি দূরে নয়।’ বলেন মোদি।
মোদি বলেন, তারপরও কারো যদি কোনও আশঙ্কা থাকে, দেশের কৃষকদের স্বার্থে এবং তাদের উদ্বেগ নিরসনের জন্য, প্রতিটি ইস্যুতে আলোচনার জন্য অত্যন্ত বিনীতভাবে আমরা প্রস্তুত।
কৃষক নেতা রাকেশ তিকাইত মোদির ভাষণের পর বলেন, কোম্পানির সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতকে বেসরকারিকরণ করতে চাইছেন। এখানে কৃষকের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে।