আরমানিটোলায় ভবনে অগ্নিকাণ্ড : নিহত ৪
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানশনে কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে চার জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে তিন জন পুরুষ এবং একজন নারী।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় হাজী মুসা ম্যানশনে কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে চার জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে তিন জন পুরুষ এবং একজন নারী।
শুক্রবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ভোরে ঘটনাস্থল থেকে সিকিউরিটি গার্ড রাসেল মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় নিলুফার নামে ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া সকাল ১০টার পর ভবনের পাঁচ তলা থেকে আরও দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে একজন ওজিউল্লাহ। অন্য জনের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি।
দেবাশীষ বর্ধন আরও বলেন, এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। আহত ও দগ্ধ হয়ে অনেকেই মিটফোর্ড এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন।
শুক্রবার ভোররাত ৩টা ১৮ মিনিটের দিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা হাজী মুসা ম্যানশনে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। ভবনের নিচতলায় আগুন লাগলে তার ধোঁয়ায় ভবনের দুই তলা থেকে ছয় তলার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বারান্দার গ্রিল কেটে সব ফ্লোরের লোকজনকে উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে আনেন। শুক্রবার সকাল ৯টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি দল প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন আগুন এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। আমরা ফাইনাল সার্চ করে ফেলেছি। আমাদের উদ্ধারকর্মীরা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে সার্চ করেছে ভিতরে আর কোনো লোকজন নেই।
আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তদন্ত পর জানা যাবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পর তারা তদন্ত করে বলতে পারবে আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে।
এটি কি কেমিক্যাল গোডাউনে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, এখানে প্রচুর পরিমানের কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো সব অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। আমার জানামতে ফায়ার সার্ভিস এদের কোন ধরনের লাইসেন্স দেয়নি। তবে আমি জানিনা সিটি কর্পোরেশন তাদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে কিনা। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এ কেমিক্যাল গোডাউনে গড়ে উঠেছে। নিচতলায় কেমিক্যাল আর উপরে মানুষ বসবাস করে এর মানে অগ্নিকুন্ডে বসবাস করা ছাড়া আর কিছুই না। এ জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
আগুন লাগার কারণ ফায়ার সার্ভিস এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি কিনা এমন আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন এর কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এখন তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কিছুই বলতে পারছি না। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে যাবে।
আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদের দ্রুত উদ্ধার করতে পারায় তারা সবাই বেঁচে গেছেন তাদের মধ্যে কেউই আশঙ্কাজনক নয়।
কেমিক্যাল গুলা কি ধরনের এমন প্রশ্নের উত্তরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালক বলেন, আসলে এগুলা হ্যাজার্ডিয়াস কেমিক্যাল। বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে এখানে। এগুলা দেখে বুঝা যাচ্ছে কঠিন হ্যাজার্ডিয়াস কেমিক্যাল। আমরা যখন ঘটনাস্থলে প্রথম আগুন নিভাতে আসি কেমিক্যাল গুলোর জন্য আমাদের আর আগুন নেভাতে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে কেমিক্যাল খোলা রাখা হয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। যারা এই কেমিক্যাল গুলো এখানে রেখেছেন এই মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী।
প্রকৌশল নিউজ/শা