ইতিহাস গড়ে ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়
১৯৮৮ সালের পরে অস্ট্রেলিয়াকে গ্যাবায় হারের স্বাদ দিয়েছে ভারত। চার ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজ ভারত জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। ব্রিসবেনে তারা তৈরি করেছে নতুন কীর্তি। যেখানে ৩২ বছর আর ৩১ টেস্ট ধরে অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া।
১৯৮৮ সালের পরে অস্ট্রেলিয়াকে গ্যাবায় হারের স্বাদ দিয়েছে ভারত। চার ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজ ভারত জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। ব্রিসবেনে তারা তৈরি করেছে নতুন কীর্তি। যেখানে ৩২ বছর আর ৩১ টেস্ট ধরে অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া।
চোট-জর্জর পরিস্থিতিতে সেরা কয়েকজনকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার দুর্গ ব্রিসবেনে খেলতে নেমেছিল ভারত। ড্র করলেই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি তারা ধরে রাখতে পারত। কিন্তু শেষ দিনে গ্যাবার উইকেটে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ৩২৮ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে ইতিহাস গড়া অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়েছে আজিঙ্কা রাহানের দল।
মঙ্গলবার টানটান উত্তেজনায় অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে হারায় ভারত।
ব্রিসবেনে সেই ১৯৮৮ সালে শেষবার হারে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের এই দুর্গে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও বেশ আগের। ১৯৫১ সালে ২৩৪ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল তারা।
শুবমান গিল, চেতেশ্বর পূজারা, রিশভ পান্তদের নৈপুণ্যে সেসব রেকর্ড ছারখার হয়ে গেল। ১৩৮ বলে ৮৯ রান করে অপরাজিত থাকেন পান্ত। গিল করেন ১৪৬ বলে ৯১, পূজারার ব্যাট থেকে আসে ২১১ বলে ৫৬ রানের কার্যকর ইনিংস।
আগের দিনের বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে নেমে দিনের শুরুতেই রোহিত শর্মাকে হারায় ভারত। প্যাট কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় এক প্রান্ত আগলে রাখেন পূজারা। গিল খেলতে থাকেন আগ্রাসী মেজাজে। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে ১১৪ রান। যার বেশিরভাগই করেন গিল।
গিল এগোচ্ছিলেন প্রথম সেঞ্চুরির দিকে। তাকে থামান ন্যাথান লায়ন। ৮ চার ও ২ ছক্কায় স্লিপে ধরা পড়েন সিরিজে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
চারে নেমে অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে খেলতে থাকেন ওয়ানডে মেজাজে। অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে গিয়েই রাহানে খোয়ান উইকেট। কামিন্সের বলে কাট করতে গিয়ে তালুবন্দি হন টিম পেইনের।
এরপর ব্যাটিং অর্ডার বদলে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের আগে পান্তকে পাঠায় ভারত। শেষ সেশনে আরও ১৪৫ রান তোলার চাহিদা নিয়ে চা-বিরতিতে যায় তারা।
তৃতীয় সেশন শুরুর কিছুটা সময় সতর্ক ছিলেন পান্ত-পূজারা। পরিস্থিতি বুঝেই ফের রান বাড়াতে থাকেন তারা। ১৯৬ বলে ফিফটিতে পৌঁছান পূজারা। ফিফটির পর তিনি ফিরে গেলেও পান্ত ছিলেন অবিচল। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে খেলা বের করেছেন তিনিই।
ভারতের ৬১ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি ভাঙেন কামিন্স। এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন পূজারাকে। পরে নামা ব্যাটসম্যানরা দেখান জয়ের তাগিদ। পঞ্চম উইকেটে আগারওয়ালকে নিয়ে ৩৯ বলে ৩৭ ও ষষ্ঠ উইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে ৫৫ বলে ৫৩ রান যোগ করেন পান্ত।
১০০ বলে হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর পান্ত ব্যাটিং করেন তেড়েফুঁড়ে। নিজের ইনিংসের পরের ৩৯ রান তিনি করেন ৩৮ বল খেলে। আগারওয়াল ৯ রানে কামিন্সের শিকার হলেও ওয়াশিংটন প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখান ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ। লায়নের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২৯ বলে ২২ রান করেন তিনি।
শার্দুল ঠাকুর জস হ্যাজেলউডের বলে স্কয়ার লেগে লায়নকে ক্যাচ দিলেও ভারত চাপে পড়েনি। কারণ, লক্ষ্য থেকে তারা তখন মাত্র ৩ রান দূরে এবং উইকেটে অবিচল ছিলেন পান্ত। ওই ওভারের শেষ বলে লং-অফ দিয়ে চার মেরে খেলা শেষ করেন তিনিই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৩৬৯
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৩৬
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: ২৯৪
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২৮) (আগের দিন ৪/০) ৯৭ ওভারে ৩২৯/৭ (রোহিত ৭, গিল ৯১, পূজারা ৫৬, রাহানে ২৪, পান্ত ৮৯*, ওয়াশিংটন ২২, শার্দুল ২, সাইনি ০*; স্টার্ক ০/৭৫, হ্যাজেলউড ১/৭৪, কামিন্স ৪/৫৫, গ্রিন ০/১০, লায়ন ২/৮৫, লাবুশেন ০/৪)।
ফল: ভারত ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: চার ম্যাচের সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী।