কে এই মামুনুল ?
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০২০ সালে করা একটি মামলায় তাকে আগামীকাল সোমবার আদালতে পাঠানো হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মামুনুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০২০ সালে করা একটি মামলায় তাকে সোমবার আদালতে পাঠানো হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
সারা দেশে আলোচিত একটি নাম মাওলানা মামুনুল হক। হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালী এই নেতা সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারওগাঁয়ের একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন। এরপর থেকে তাকে নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
একসময়ের আলোচিত ধর্মীয় নেতা শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের চতুর্থ ছেলে মামুনুল হক। হেফাজতে ইসলামের এই কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সংগঠনটির ঢাকা মহানগরী শাখার মহাসচিবের দায়িত্বেও আছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব তিনি। ইসলামি আলোচক হিসেবে সারা দেশে পরিচিত মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ অবরুদ্ধ হয়েছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষের দ্বারা। তিনি তখন দাবি করেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। পরে খবর পেয়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে মামুনুল হককে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনায় মামুনুল হক।
হেফাজতের এই নেতা জানান, মামুনুল হকের আয়ের অনেক উৎস রয়েছে। তার আয়ের একটি বড় অংশ আসে ওয়াজ মাহফিল থেকে। এ ছাড়া তার দেয়া তথ্যমতে, কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে অবস্থিত উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘তারবিয়াতুল উম্মাহ’ মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মামুনুল হক। এখান থেকে প্রিন্সিপাল হিসেবে মোটা অঙ্কের বেতন পান। পাশাপাশি বাবার প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ‘জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা’য় শিক্ষকতা করেন তিনি। সেখান থেকে শিক্ষক হিসেবে বেতন পান এই হেফাজত নেতা।
মাদ্রাসাটির শিক্ষক মাওলানা ইউনুস আনোয়ার জানান, ২০০০ সাল থেকে মামুনুল হক এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। এর আগে তিনি মিরপুর-১৪ নম্বরের দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। এরও আগে তিনি সিরাজগঞ্জের বেতুয়ায় একটি মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।
মামুনুল হকের বেতন কাঠামো সম্পর্কে জানতে চাইলে মাওলানা ইউনুস আনোয়ার বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকদের বেতন সামান্য। মাদ্রাসাটির মুহাদ্দিস ক্যাটাগরিতে বেতন পান মামুনুল হক সাহেব। ১৫ হাজার টাকার মতো। তারা পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই সচ্ছল। দেশে ১০টি সচ্ছল আলেম পরিবার গুনলে তাদের পরিবার একটি। এ ছাড়া তার ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য আছে বলেও শুনেছি।’
এদিকে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘রাহমানী পয়গাম’-এর সম্পাদকও মাওলানা মামুনুল হক। সেখান থেকেও একটি সম্মানী পান বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বাংলাবাজারের একটি মসজিদে জুমা খতিব হিসেবেও আছেন মামুনুল হক। এর বাইরে দেশ ও প্রবাস থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা বিভিন্ন সময় তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
হেফাজত নেতা মুফতি আব্দুল মোমিন বলেন, ‘মামুনুল হক সাহেবের আয়ের বিষয়ে বিস্তারিত উনিই বলতে পারবেন। আমাদের যতটুকু জানা আছে, সে অনুযায়ী বলতে পারব। ওনার মাদ্রাসার শিক্ষকতা আছে, ওনার নিজের মাদ্রাসা আছে, সেখান থেকে একটা বেতন পান। ওয়াজ ও বেতন থেকে নিয়মিত বেশ কিছু হাদিয়া আসে। এগুলো মূলত তার আয়ের সোর্স।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেফাজত নেতা জানান, ‘তামাদ্দুন’ নামে একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন মাওলানা মামুনুল হক। কোম্পানিটি এখন বিলুপ্ত হলেও সেখান থেকে তিনি বেশি আয় করেন বলে দাবি করেন ওই হেফাজত নেতা।
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামুনুল হক আলোচনায় আসেন মূলত হেফাজতে ইসলামকে কেন্দ্র করেই। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর তিনি গ্রেপ্তার হন। বেশ কয়েক মাস কারাভোগের পর বেরিয়ে এসে তিনি সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এরপর থেকেই মূলত দেশব্যাপী বিভিন্ন মাহফিলে তার চাহিদা বেড়ে যায়। কয়েক মাস আগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে তার মাঠ গরম করা কিছু বক্তৃতায় তিনি সরকার বিরোধী বলয়ের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।
হেফাজত সূত্র জানায়, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের আগে মামুনুল হক বাবুনগরী বলয়ের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। হেফাজতের নতুন কমিটিতে তিনি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ পান। এছাড়া তাকে ঢাকা মহানগরীর কমিটির মহাসচিবও করা হয়। নতুন কমিটিতে মামুনুল হক প্রভাব খাটিয়ে নিজের পদ ছাড়াও তার ঘনিষ্ঠ অনেককে জায়গা করে দেন বলে প্রচার আছে।
মামুনুল হক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার একটি ভবনে থাকেন। গত প্রায় ১০ বছর ধরে পাঁচ ভাই মিলে সেখানে থাকছেন। ভবনটির মালিক তারা নিজেরাই। এর আগে রাজধানীর আজিমপুরে পৈতৃক বাড়িতে থাকতেন। সেই বাড়িটি এখন বোনদের দখলে রয়েছে। মোহাম্মদপুরের বাসার বাইরে বসিলায় মামুনুল হকের ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট আছে বলে জানা গেছে।
সূত্র -অনলাইন থেকে নেওয়া।