ক্রিকেট নিয়ে শঙ্কায় আফগান নারীরা

আফগানিস্তান নারী ক্রিকেট দলের অন্য অনেক সদস্যের মত এসেলও এখন আত্মগোপনে।

ক্রিকেট নিয়ে শঙ্কায় আফগান নারীরা

আফগানিস্তান নারী ক্রিকেট দলের অন্য অনেক সদস্যের মত এসেলও এখন আত্মগোপনে।

এসেল তার আসল নাম নয়। তালেবানের আফগানিস্তানে নাম প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলাও তিনি নিরপদ মনে করছেন না।
 
বিবিসি একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কাবুলে তালেবান সদস্যরা এরইমধ্যে নারী ক্রিকেট দলের সদস্যদের খোঁজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
 
এসেল বিবিসিকে বলেন, “আমার মত যারাই ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলাধুলায় যুক্ত, তারা কেউ এখন আর নিরাপদ না। কাবুলের পরিস্থিতি এখন মোটেও ভালো না।”

এসেলদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। প্রতি রাতে সেখানে তারা নিজেদের সঙ্কটের গভীরতা নিয়ে আলাপ করেন। কী করা উচিত, সে বিষয়ে যে যার পরিকল্পনা বলেন। কিন্তু সবাই ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।

অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকে বাড়ির বাইরে খুব কমই বের হন এসেল। নিজের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামগুলো তিনি লুকিয়ে রেখেছেন।

এর আগে তার দলেরই একজন নারী ক্রিকেটার কীভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, সে কথা তিনি বলেছেন বিবিসিকে। যে গ্রামে তারা ক্রিকেট খেলতেন, সেখানে তাদের পরিচিত কিছু লোক এখন তালেবানের সঙ্গে কাজ করে।

এসেল জানান, তালেবান যখন কাবুলের দখল নিল, তখন সেই লোকেরা এসে তাদের শাসিয়ে গেছে, “তোমরা যদি ক্রিকেট খেলার চেষ্টা কর, তাহলে আমরা আবার এসে তোমাদের খুন করে যাব।”

অনেক বছর ধরে আফগান নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে জড়িত আছেন তাকওয়া, এটাও ছদ্মনাম। কাবুলের পতনের পর তিনি অবশ্য পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ধরা পরার ভয়ে একটি সপ্তাহ তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করেছেন।

তাকওয়ার বিষয়ে তথ্য নেওয়ার জন্য তালেবান তার বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। তবে তিনি বলে এসেছেন, তাকওয়ার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
 
সে সময়ের কথা মনে করে তিনি বলেন, “কী হতে পারত সেটা আমি ভাবতেও চাই না। তালেবান যখন কাবুলে আসে, আমি এক সপ্তাহ কিছু খেতে পারিনি, ঘুমাতেও পারিনি।

“আমি কেবল নিজের কথাই ভাবিনি, আমি আমার দলের মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে খেলার জন্য। লেখাপড়া ছেড়েছে, এমনকি কয়েকজন বিয়ে পর্যন্ত করেনি, যাতে তারা আফগানিস্তানের হয়ে খেলতে পারে। আমি তাদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।”
 
সাবেক খেলোয়াড় হারীর বিবিসির সঙ্গে ছদ্মনামেই কথা বলেছেন। তিনি জানান, একজন আফগান নারী হিসেবে ক্রিকেট খেলা তাদের কাছে উইকেট আর রানের চেয়ে অনেক বেশি কিছু।

“আমি যখন খেলি নিজেকে আমার অনেক শক্তপোক্ত নারী মনে হয়। আমি তখন অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকি, নিজের জন্য গর্ব বোধ করি।

“আমি নিজেকে এমন একজন নারী হিসেবে কল্পনা করতে পারি, যার যে কোনো কিছু করার সামর্থ্য রয়েছে এবং নিজের স্বপ্নকে সে বাস্তবে পরিণত করতে পারে।”

কিন্তু হারীর এবং আফগানিস্তান নারী ক্রিকেট দলের বাকি সদস্যদের সেই স্বপ্ন হয়ত শেষ হতে যাচ্ছে।

এক বছর আগেও যাদের অনেক স্বপ্ন ছিল, এখন তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত। তারা মনে করছেন, যে ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ তাদের সহায়তা করতে পারত, তারাও এখন আর তাদের কথা ভাবছে না।

আফগানিস্তানে ক্রিকেটের উত্থান অনেকটা কল্পকাহিনীর মত। খেলাধুলার উপর থেকে তালেবানের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ২০০১ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদস্য হয় দেশটি।

তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ফুটবলসহ অন্যান্য খেলার মত ক্রিকেটেও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করে আফগানিস্তান।

বিবিসি পশতু বিভাগের সম্পাদক ইমাল পাসারলির ভাষায়, “আমরা যদি গত ২০ বছরের দিকে ফিরে দেখি, আমাদের রয়েছে যুদ্ধ, আত্মঘাতী হামলা, আমাদের অনেক সমস্যাই রয়েছে, কিন্তু একমাত্র খেলা হলেই পুরো জাতি আনন্দে মেতে উঠত, এর সঙ্গে তাদের আবেগ জড়িত।

“খেলাই একমাত্র মানুষকে আনন্দের সময় কিংবা স্থান দিতে পেরেছে, যেখানে তারা নিজেদের আশপাশে যা কিছু ঘটছিল, সেসব ভুলে থাকতে পারত।”

আফগান পুরুষ ক্রিকেট দলের বিশ্বের দরবারে উঠে আসার মধ্য দিয়ে ২০০০ সালের পর থেকে আফগানিস্তানে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা শুরু হয়।

আফগানিস্তানের প্রথম জাতীয় নারী দল গঠন হয় ২০১০ সালে। তবে শুরু থেকেই তারা বাধার মুখে পড়ে। তালেবানের হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রথম কয়েক বছর নারী দলকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেয়নি আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)।

২০১২ সালে তাজিকিস্তানে ছয় সদস্যের ক্রিকেট দলের একটি আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে জয় পায় আফগান নারীরা। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তারা গুটিয়ে যায়। আবারও তালেবানের হুমকির অজুহাত দেখায় এসিবি।

দল ভেঙে গেলেও এর পর থেকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে তরুণী এবং মেয়েরা অস্থায়ী উইকেট তৈরি করে খেলতে শুরু করে। নারীদের জন্য এ সময় খুব কমই খেলার আয়োজন করেছে এসিবি।

কিন্তু নতুন প্রজন্মের নারী ক্রিকেটারদের জন্য সেই একই সমস্যা রয়ে যায়।

এসেল বিবিসিকে বলেন, “আমার মত যারাই ক্রিকেট বা অন্য কোনো খেলাধুলায় যুক্ত, তারা কেউ এখন আর নিরাপদ না। কাবুলের পরিস্থিতি এখন মোটেও ভালো না।”

এসেলদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। প্রতি রাতে সেখানে তারা নিজেদের সঙ্কটের গভীরতা নিয়ে আলাপ করেন। কী করা উচিত, সে বিষয়ে যে যার পরিকল্পনা বলেন। কিন্তু সবাই ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।

অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকে বাড়ির বাইরে খুব কমই বের হন এসেল। নিজের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামগুলো তিনি লুকিয়ে রেখেছেন।

এর আগে তার দলেরই একজন নারী ক্রিকেটার কীভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, সে কথা তিনি বলেছেন বিবিসিকে। যে গ্রামে তারা ক্রিকেট খেলতেন, সেখানে তাদের পরিচিত কিছু লোক এখন তালেবানের সঙ্গে কাজ করে।

এসেল জানান, তালেবান যখন কাবুলের দখল নিল, তখন সেই লোকেরা এসে তাদের শাসিয়ে গেছে, “তোমরা যদি ক্রিকেট খেলার চেষ্টা কর, তাহলে আমরা আবার এসে তোমাদের খুন করে যাব।”