বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশকে আজকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, কাজেই সরকারি কর্মকর্তাদের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহসী হবার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশকে আজকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, কাজেই সরকারি কর্মকর্তাদের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহসী হবার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি এবং সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং আমাদের সেগুলি অতিক্রম করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশসাশন পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে ২৭ জন কর্মকর্তা, তিনটি মন্ত্রণালয় ও একটি ইউনিটের কাছে পদক তুলে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের প্রভাবে সারাবিশ্বে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। এ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, এজন্য হয়তো আমাদের পত্রপত্রিকা নানা কথা লিখবে ‘টক শো’তে নানা কথা বলবে, বিরোধী দলেরা নানা কথা বলবে। হ্যাঁ বিরোধী দল বলবেই কারণ বলাটাই তাদের কর্তব্য এবং তারা বলে যাক। কিন্তু আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সঠিক পথে আছি কি না, সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছি কি না, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কি না এবং দেশের তৃণমূলের সাধারণ মানুষ যথাযথ সেবাটা পাচ্ছে কি না- আমরা যদি সেভাবে চিন্তা করি, তাহলে কে কি করলো সেদিকে আমাদের খুব একটা নজর দিতে হবেনা।
সমালোচনা শুনে কোথাও কোন ঘাটতি থাকার বিষয়টি পরীক্ষা করে নেয়া যেতে পারে মর্মেও অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কিন্তু এই কথা শুনে কেউ যেন বিভ্রান্ত বা হতাশাগ্রস্থ না হন- সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, হতাশ হবার মত কিছু নেই। যখন যে অবস্থা হবে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই আমাদের চলতে হবে এবং আমাদের নিজস্ব যতটুকু ব্যবস্থা আছে, সেটা নিয়েই আমরা চলবো।
এবার ‘সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা’য় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে।
‘জনসেবায় উদ্ভাবন’ ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষা অ্যাপ’-এর জন্য দলগতভাবে পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ঢাকার জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম এবং সুরক্ষা ডেভেলপার ইউনিট।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণপদক, সম্মাননা পত্র, ব্যক্তিগত অবদানের জন্য দুই লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। এর আগে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
জনপ্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের সৃজনশীল ও গঠনমূলক কার্যক্রম উৎসাহিত করার মাধ্যমে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহিতকরণ ও সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অধিকতর গতিশীল করতে সরকার ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই প্রথমবারের মতো জনপ্রশাসন পদক প্রদান শুরু করে। পরবর্তীতে ‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা ২০১৫ (২০১৬ সালে সংশোধিত)’ করা হয়। এ বছর সেই নীতিমালা বাতিল করে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করা হয়।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী- সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রশাসন, সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, মানব উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ও সংকট মোকাবিলা, অপরাধ প্রতিরোধ, জনসেবায় উদ্ভাবন, সংস্কার, গবেষণা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পুনরায় খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতির পিতার দেয়া বক্তব্যের অনুসরণে বলেন, যে দেশের মাটি এত উর্বর, যেখানে বীজ ফেললেই গাছ ও ফল হয়, সে দেশে মানুষ খাদ্যের জন্য কষ্ট পেতে পারেনা। কাজেই আমাদের যেটুকু সম্পদ তাকে যদি আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, আমাদের মানবসম্পদ এবং মাটি সেটাকে কাজে লাগিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ডলারে আদান প্রদান বন্ধ করে দেয়া, যে কারণে আজকে বিশে^র অনেক উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশও ভুক্তভোগী। আজকে সার কেনা, খাদ্য কেনা বা জ্বালানি তেল কেনার মত বিষয়ে আমরা বাধাগ্রস্থ হচ্ছি। সমগ্র বিশ্বই একটা দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে একটি দেশকে শিক্ষা দেয়ার ফর্মূলায় আজকে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত অনেক উন্নত দেশও বিপাকে পড়ে গেছে। আমাদের দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু অনেক উন্নত দেশে অনেক অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে।
ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক উন্নত দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে অনেক উন্নত দেশ বাধ্যবাধকতা আরোপ করারও তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতায় বাংলাদেশ এখনও অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থায় থাকলেও আমাদের আপদকালিন চিন্তায় আরো সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হতে হবে এবং যেকোন প্রকার অপচয়কে রোধ করতে হবে।
সরকার প্রধান এই সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের গতি আরো ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি বিশে^ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাতেও তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী অতীতে দক্ষিণ জনপদের অবহেলিত জনগণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, একটি মানুষও আর অবেহেলিত থাকবেনা এবং কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবেনা।
তাঁর সরকারের ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর তৈরীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা সবার ঠিকানা গড়ে দেব। শুধু ঘর নয়, তাদের জীবন-জীবিকার সুযোগও করে দিচ্ছে সরকার।
তাঁর সরকারের ইতোমধ্যে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সবগুলো উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন উপজেলা হিসেবেও ঘোষণা প্রদানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে পুরো বাংলাদেশকেই আমরা এমনিভাবে ইনশাল্লাহ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করতে পারবো, প্রত্যেক মানুষের একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকবে। তাহলে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখাটাও সহজ হবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাঁর সরকার সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এবং একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ সফলভাবে বাস্তবায়ন করাটা দৃপ্তিদায়ক বলেও তিনি উল্লেখ করেন এবং এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে সকলকে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদও জানান তিনি।
জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ এর উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশও গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে ভবিষ্যতে যেন আরো বেশি করে পদক দেয়া সম্ভব হয়, সেজন্য সকলকে আন্তরিতার সঙ্গে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে যান এবং আপনাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তারাও যেন আপনাদের পদাংক অনুসরণ করে দেশের উন্নয়ন- অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে এবং চলমান বিশে^র সঙ্গে তাল রেখে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে দেয়া জাতির পিতার ভাষণেরও উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারি ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদেরকে জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’
অর্থাৎ জনস্বার্থে নিবেদিত প্রাণ হয়েই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে, যেটা আপনারা করছেন আর আমাদের সংবিধানেও বলে দেয়া হয়েছে যে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ, বলেন প্রধানমন্ত্রী। সুত্র-বাসস।