বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রকাশের ভূমিকায় টিআইবির বিস্ময়!
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে বিস্মিত প্রকাশ করেছে। কেননা, দেশে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে ভূমিকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে রয়েছে বলে সংস্থাটির গবেষণা ওঠে এসেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে বিস্মিত প্রকাশ করেছে। কেননা, দেশে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে ভূমিকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে রয়েছে বলে সংস্থাটির গবেষণা ওঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার টিআইবি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় বিস্ময় প্রকাশ করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ১৫৩টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে টিআইবি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নমুনায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭ শতাংশের কোনো ওয়েবসাইট নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫ শতাংশের ঠিকানা থাকলে এক্সেসেবল নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভূমিকা উত্তম। প্রায় প্রতিটি মাপকাঠিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলক ভালো। ৩৭ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রদান সন্তোষজনক। তবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলক ভালো করলেও আরও অনেক অগ্রগতির সুযোগ আছে। কেননা, ৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উদ্বেগজনক। অবশিষ্টদের ভূমিকাও পর্যাপ্ত নয়।
তিনি বলেন, একটা প্রকল্পের আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একটা স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করতে পেরেছে। অন্যদিকে এনজিওগুলোর কোনো প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এনজিওর স্কোর উদ্বেগজনক। কেন, আমরা পিছিয়ে আছি বিষয়টা আরো জোরালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশে ঘাটতি রয়েছে। ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য থাকার কথা ছিল, তা নেই। কাজেই তুলনামূলকভাবে তারা আরো বেশি পিছিয়ে আছে বলে মনে করি। কাজেই বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রয়াস নেই। সরকারি-বেসরকারি দুই পর্যায়ে উদ্যোগের ঘাটতি আছে। ফলে সার্বিকভাবে দেশের মানুষ তথ্য অধিকার আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির পরিচালক বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভালো করবে বলে আশা করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত আমরা তা পাইনি। হয়তো তথ্য প্রকাশের তুলনায় অন্য ক্ষেত্রে হয়তো তাদের গুরুত্ব বেশি। যেহেতু বেসরকারি সংস্থাগুলো তথ্য প্রকাশ নিয়ে কাজ করে, সেক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষেত্রে চর্চা বাড়াতে হবে। আগামীতে যেন ভালো ফল পাই সেই আশা করবো।
গোপনীয়তা যুক্তি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি গোপন রাখা যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক যেকোনো চুক্তিই হোক না কেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা গোপন রাখতে পারে না। আমরা বলবো এটা শুধু তথ্য অধিকারের অবমাননা নয়, এটা আসলে সাংবিধানিক অবমাননা। কারণ, সংবিধানেও আছে, যেকোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে উপস্থাপিত হবে, আলোচিত হবে, প্রকাশিত হবে; এটা প্রতিপালিত হয় না। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে করি। তথ্য প্রকাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্কোরিং ভালো ও সন্তোষজনক মোটেই নয়।
তিনি বলেন, তথ্য প্রকাশ দুর্নীতি প্রতিরোধের অন্যতম কৌশল। তবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য তথ্য প্রকাশ করে দুর্নীতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সার্বিকভাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিশ্চিত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, যথাযথভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং কাজ করার সৎ সাহস থাকতে হবে। তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনলে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়। বিশ্বব্যাপী যেন এই চর্চা হয়। সরকারের নীতিমালার মধ্যেও এটা আছে।