মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতি: সৌদি ও আমিরাতের নিকট অস্ত্র বিক্রি বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে যেসব সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির আগাম অনুমোদন দিয়েছিলেন তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর ২৭ জানুয়ারি নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা নিশ্চিত হওয়া যে, আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কিনা। এ বিষয়টিই এখন আমরা যাচাই বাছাই করছি।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথম সৌদি-আমিরাতের কাছে মার্কিন সমরাস্ত্র বিক্রি স্থগিতের খবর দেয়। ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের কাছে প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন্স থেকে শুরু করে আমিরাতের কাছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির মতো সিদ্ধান্তগুলোও রয়েছে।
নির্বাচনি প্রচারণায় সৌদি আরবের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পর্যালোচনা বা পুনর্মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জো বাইডেন। এখন নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউজে অভিষেকের এক সপ্তাহের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিলো তার প্রশাসন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বদলে দিতে শুরু করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইসরায়েলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ইরানকে চাপে রাখতে সৌদি-আমিরাতকে কাছে টানার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ে বড় ধরনের ধাক্কা খায় রিয়াদ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিনন্দন বার্তায় ভাসছিলেন জো বাইডেন তখন দৃশ্যত মুখে কুলুপ এঁটেছিল সৌদি আরব। পরে সমালোচনার মুখে তাকে অভিনন্দন জানালেও এজন্য ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় নেয় মধ্যপ্রাচ্যের এই রাজতান্ত্রিক দেশটি।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ইহুদি জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। ট্রাম্প-কুশনারের প্রচেষ্টাতেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হয় মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি প্রভাব বলয়ের একাধিক দেশ।
সৌদি আরবও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। খাশোগি হত্যকাণ্ডের জবাবদিহিতা থেকেও যুবরাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি যুবরাজের জবাবদিহিতার দাবি তুলেছিলেন বাইডেন। নির্বাচনি প্রচারে রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। আহ্বান জানিয়েছেন ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনে মার্কিন সহায়তা বন্ধের। এমন বাস্তবতায় ক্ষমতায় আসার এক সপ্তাহের মাথায় সৌদি-আমিরাতের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বাইডেন প্রশাসন।