মাস্ক পরে শরীরচর্চা

কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপি মানুষের জীবনযাত্রার ধরন আমুল পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু করোনা ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা সুরক্ষা নিশ্চিত করে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। আর এই সুরক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের এখন অন্যতম একটি ব্যবহার্য জিনিস হচ্ছে মাস্ক।

মাস্ক পরে শরীরচর্চা

কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপি মানুষের জীবনযাত্রার ধরন আমুল পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু করোনা ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা সুরক্ষা নিশ্চিত করে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। আর এই সুরক্ষার ক্ষেত্রে মানুষের এখন অন্যতম একটি ব্যবহার্য জিনিস হচ্ছে মাস্ক।

ঘরের বাইরে বের হলে মাস্কের ব্যবহার এখন অনেকটা বাধ্যতামূলক। অফিস-আদালত, দোকানপাট, শপিংমল থেকে অনেক জায়গাই এখন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় সতর্কতার অংশ হিসেবে সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে নো মাস্ক, নো সার্ভিস।

এর কারণ করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া। এই করোনাকালে সব বয়সের মানুষকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সব সময়। করোনাকালে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের যেমন গভীর যোগাযোগ আছে, তেমনি নিবিড় যোগাযোগ আছে শরীর চর্চার।

কিন্তু মাস্ক পরে শরীরচর্চা করা যায় কি? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। কারণ, মাস্ক পরে ব্যায়াম করা ও হাঁটাহাঁটি করার সময় কারও কারও শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। তা ছাড়া নাক ও মুখ ঢাকা থাকায় শ্বাস টেনে ফুসফুসে বাতাস নিতে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয় বলে মনে করা হয়।

এ বিষয় নিয়ে যে বিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন না, তা নয়। বরং করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। এদিকে, ব্যায়াম করার সময় মাস্ক না পরার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কারণ, তাদের বক্তব্য এতে করে মানুষ স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারবে না। যদিও বিজ্ঞানীরা দ্বিমত পোষণ করেছেন এই বক্তব্যের সঙ্গে।

ব্যায়াম, শরীরচর্চা বা কোনো কায়িক পরিশ্রমের সময় মাস্ক পরে থাকলে রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রভাব পড়ে সামান্যই, যা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।

কিন্তু বিষয়টা কি এতটাই সহজ? এমন প্রশ্নও উঠছে। কায়িক পরিশ্রমে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমে (হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস আর রক্তনালি) মাস্কের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, অনেকেই মাস্ক পরেই স্বচ্ছন্দে ব্যায়াম করছেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরে থাকলে কোনো ঝামেলা হবে না।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগোর এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট সুসান হপকিনস মনে করেন, ব্যায়াম, শরীরচর্চা বা কোনো কায়িক পরিশ্রমের সময় মাস্ক পরে থাকলে রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রভাব পড়ে সামান্যই, যা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।

সুসান হপকিনস ও তাঁর সহগবেষক বিভিন্ন ধরনের আচ্ছাদনে মুখ ঢেকে নিরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্ক, এননাইন্টিফাইভ ও কারখানায় ব্যবহৃত মাস্ক রয়েছে। তবে উভয়েই মনে করেন এই ধরনের নিরীক্ষার অবকাশ আরও রয়ে গেছে।

সুসান হপকিনস ও তাঁর সহগবেষকের অভিমত হলো, স্বাস্থ্যবান মানুষেরা মাস্ক পরে ব্যায়াম করলে তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। কারও কারও হয়তো অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষত যাঁরা মাস্ক পরায় অভ্যস্ত নন, তাঁদের। তবে মাস্ক পরা অবস্থায় অক্সিজেন গ্রহণের পাশাপাশি কিছুটা কার্বন ডাই-অক্সাইডও নেওয়া হলেও তাতে চিন্তার কিছু নেই বলেই গবেষকেরা আশ্বস্ত করেছেন।

স্বাস্থ্যবান মানুষেরা মাস্ক পরে ব্যায়াম করলে তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। যদিও শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির মতো অসুখে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের কথা আলাদা। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট শঙ্কার মধ্যে আছেন।

মাস্ক পরে আসলে যেকোনো সুস্থ সবল ব্যক্তির, নারী কিংবা পুরুষ, ব্যায়াম করতে কোনো সমস্যা হবে না বলেই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

প্রকৌশল নিউজ/শা