মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করুন : ডিসিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলোর যত্ন নেয়ার পাশাপাশি তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে এবং ভয় ও লোভকে দূরে রেখে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করার জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলোর যত্ন নেয়ার পাশাপাশি তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে এবং ভয় ও লোভকে দূরে রেখে আইনানুগ দায়িত্ব পালন করার জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলে খেয়াল রাখবেন কারণ আমি আর দেখতে চাইনা কোন শহীদ পরিবার, জাতির পিতার চিঠি যাঁর হাতে সে ভিক্ষা করে খাবে-এটা যেন না হয়। আমরা যত কাজই করি এই কাজটা সব থেকে আগে করতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ভিক্ষা করবে এটা আমাদের জন্য মোটেই সম্মানজনক নয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দুই বছর পর রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জেলা-উপজেলা পর্যায়ের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মাষ্টার প্ল্যানের মাধ্যমে করার এবং এজন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের আহবান জানান। তিনি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পরিহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা ডিসিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে সকল প্রকার ভয়-ভীতি ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে আইনানুগ দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, সেবার মনোভাব নিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকলে আপনাদের পক্ষে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। আর সরকারি সেবা নিতে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সুশাসন সংহতকরণের উদ্দেশ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকগণকে আরও আন্তরিকভাবে কাজ করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের জন্য অনুষ্ঠানে ২৪ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বক্তব্য রাখেন।
খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে এবং চাঁদপুর ও রংপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও আসিফ আহসান জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের মাধ্যমে সারাদেশে সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণের কল্যাণ ও কাজ নিশ্চিত করার জন্য সেবা সম্পর্কিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও কোন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ পরিবার বা গণহত্যার শিকার কোন পরিবার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কিনা সেটা আপনাদের দেখতে হবে। এঁদের অবদানে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। জাতির পিতার ডাকে সবকিছু ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে তারা দেশ স্বাধীন করলেও ’৭৫ এর পর তাঁদের আর অস্তিত্বই স্বীকার করা হয়নি। তাই, তাঁদের দুর্ভোগের সীমা ছিলনা। কিন্তু এখন আমরা যখন সরকার পরিচালনা করছি, তখন তাঁদের কেউ ভিক্ষা বৃত্তি করবে সেটা আমাদের জন্য খুব লজ্জার। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি লক্ষ্য রাখার আহবান জানান।
তিনি বলেন, অনগ্রসর শ্রেণীর অনেককে পুনর্বাসিত করা হয়েছে কিন্তু একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে, সেটার অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। আর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে যেখানে জমি পাওয়া যাবেনা সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে অর্থ দেয়া হবে। প্রকল্পে টাকা না থাকলেও আমরা জমি কিনে দিতে পারবো। দ্রুত এই কাজগুলো করার অনুরোধ জানান তিনি।
পাশাপাশি হাওড় অঞ্চলে রাস্তা-ঘাট নির্মাণের ক্ষেত্রে এখন থেকে রাস্তাগুলো এলিভিয়েটেড করার এবং উন্নয়নের জন্য পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য স্থানীয় সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এই ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল যখন তৈরী হবে তখন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে যে অঞ্চলে যে জিনিষের প্রাধান্য সেদিকে লক্ষ্য রেখেই উৎপাদন বাড়ানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের চাহিদা মেটানো এবং বিদেশে রপ্তানীর জন্যও নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করতে হবে। পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন বিনিয়োগ আসে এবং যেখানে বিনিয়োগ আসছে সেখানে যেন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে ওঠে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মুখ্য সচিব এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্য রাখার জন্য তিনি আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্কুল ফিডিং কর্মসূচীটিকে স্বপ্রণোদিত কর্মসূচিতে রূপান্তর করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় বিত্তশালীগণ সমন্বিতভাবে এই কাজটি করতে পারেন। এতে ঝড়ে পড়া রোধ পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যেসব প্রকল্প চলমান আছে বা যেসব প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে সেগুলো যথাযথ মানসম্পন্ন হচ্ছে কিনা এবং অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত এবং নজরদারির ব্যবস্থা আপনাদের অবশ্যই নিতে হবে। জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধিদের যেসব প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে জনসেবা ও জনকল্যাণমূলক সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এতে করে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
তাঁর সরকার দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামুখী জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, সিটিজেনস চার্টার ইত্যাদির বাস্তবায়ন জোরদার করারও আহবান জানান।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে সেই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব। সুত্র-বাসস।