যুব সমাজকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে ৪৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প
যুব সমাজ, নারী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের উপযোগি ও চাহিদাভিত্তিক কর্মীবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে।
যুব সমাজ, নারী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের উপযোগি ও চাহিদাভিত্তিক কর্মীবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সভায় যোগদান করেন। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, একনেক সভায় ৭ হাজার ৫৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন প্রকল্প এবং ২টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।
যুবসমাজ, নারী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের উপযোগি ও চাহিদাভিত্তিক কর্মীবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘এক্সসিলারেটিং অ্যান্ড স্ট্রেনথদেনিং স্কিলস ফর ইকনোমিক ট্রান্সফারমেশন (এএসএসইটি)’ প্রকল্পটি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড জুলাই ২০২১ হতে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প ব্যয়ের ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা সরকার অর্থায়ন করবে এবং বাকী ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বিশ^ব্যাংকের নিকট থেকে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে।
এম এ মান্নান বলেন, দেশে দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব রয়েছে। তাই দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানান, ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট সুবিধাকে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এএসএসইটি অত্যন্ত সময়োপযোগি প্রকল্প বলে প্রধানমন্ত্রী অভিহিত করেছেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি যুবসমাজের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং দেশ-বিদেশে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় মহিলা এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ যুবসমাজ ও কর্মীদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরির লক্ষ্যে তাঁদেরকে চাহিদাভিত্তিক দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা দেশের বিকাশমান অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মুল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে-অনাবাসিক ভবন নির্মাণে ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ, প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ অনুদান, প্রকল্প অনুদান,কনসালটেন্সি, সেমিনার ও কনফারেন্স, আইসিটি সরঞ্জাম, কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয়, অফিস সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সেক্টরে কোভিড-১৯ মোকাবিলা সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা প্রদান।
একনেক সভায় ১ হাজার ১৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প ব্যয়ের সম্পূর্ণ অর্থ সরকার অর্থায়ন করবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পরিবেশ দূষণ কমাতে শিল্প মালিকরা যেন শিল্প-কারখানায় সিইটিপি ও ইটিপি স্থাপন করেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি হিলি, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনে পণ্য ও যাত্রী স্ক্যানার মেশিন বসানোর নিদের্শ প্রদান করেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-হিলি, বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা এলসি স্টেশনের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প; ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরভুমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প; ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার রংপুর স্থাপন প্রকল্প; ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র (মাদারীপুর) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলে ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা। সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদী হতে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমির উন্নয়ন এবং প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর ১৫ পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০ কোটি ৪২ লাখ ৯২ হাজার টাকা। সুত্র-বাসস।