রূপগঞ্জে জুস কারখানা থেকে অগ্নিদগ্ধ ৫১ লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা থেকে অগ্নিদগ্ধ ৪৯ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভয়াবহ আগ্নিকান্ডে নিহতের সংখ্যা আরো বেশী হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের লাশ বের করা শুরু হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানা থেকে অগ্নিদগ্ধ ৪৯ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভয়াবহ আগ্নিকান্ডে নিহতের সংখ্যা আরো বেশী হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের লাশ বের করা শুরু হয়েছে৷
শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর ১টায় কারখানার ভেতর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা শুরু হয়৷ লাশগুলো মরদেহবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বলেন্সে তোলা হচ্ছে৷
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক তদবাশীষ বর্ন দুপুর সোয়া ২টায় সংবাদকে বলেন, তারা এ পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ পেয়েছেন। তারা অনুমান করছেন ভেতরে লাশের সংখ্যা আরো বেশী হবে। লাশগুলো বের করা হচ্ছে৷ বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়িতে সেসব লাশ তোলা হচ্ছে৷ এর আগে আগুন আতঙ্কে কারখানা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া বৃহস্পতিবার রাতে তিনজনের মৃত্যু হয়৷
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুশরাত জাহান বলেন, ভেতর থেকে অনেকের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা৷ লাশের সঠিক হিসাবের বিষয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্রিফিং করা হবে৷ লাশ গাড়িতে তোলা হচ্ছে৷
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রবেশ করা গেছে৷ সেখান থেকেই এতগুলো লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কারখানা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে৷ মুহুর্তেই আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে৷ আতঙ্কে শ্রমিকরা ভবনের ছাদে জড়ো হন৷ ছাদসহ বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে৷
শুক্রবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় আগুন জ্বলছিল৷ কারখানাটির পঞ্চম তলার একপাশে সেমাই, সেমাই ভাজার তেল, পলিথিন; অপর পাশে কারখানার গুদাম বলে শ্রমিকেরা জানিয়েছেন। কারখানার ষষ্ঠ তলায় কার্টনের গুদাম বলে জানা গেছে। টানা ১৮ ঘন্টা ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় ছয়তলা ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়৷
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল্লা আল আরেফীন বলেন, কারখানাটির ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে। ভবনটিতে ফাটল ধরায় আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে৷
কারখানার শ্রমিকেরা বলেন, কারখানার চতুর্থ তলায় ললিপপ, তরল চকলেট, তৃতীয় তলায় অরগানিক পানীয় (জুস, লাচ্ছি), দোতলায় টোস্ট বিস্কুট, বিভিন্ন ধরনের পানীয় এবং নিচতলায় বাক্স ও পলিথিন তৈরির কারখানা। কারখানাটিতে প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করলেও আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে ১০০০ থেকে ১২০০ শ্রমিক কাজ করতেন৷
প্রতিষ্ঠানটির এডমিন ইনচার্জ সালাউদ্দিন মিয়া জানান, সেকশনের পাঁচটি ফ্লোরে চারশ’ শ্রমিক বিকালে ওভারটাইম করছিলেন। সে ভবনের উপরের ফ্লোরে আমাদের স্টোর। সেখানে কয়েক কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।
নিখোঁজ শ্রমিকদের ক্ষুব্দ স্বজনরা কয়েক দফায় ভাঙচুর চালিয়েছে৷ তাদের অভিযোগ, আগুন নেভাতে দেরি করছে ফায়ার সার্ভিস৷ তাদের কার্যক্রমে গাফিলতি রয়েছে৷ অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ ক্ষুব্দ স্বজনদের৷
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে কারখানা ও আশেপাশের সড়কে ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্দ স্বজনরা৷ তারা স্থানীয় একটি আনসার ক্যাম্পেও হামলা চালায়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার সেল ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ৷ এই ঘটনায় আনসার সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ আগের রাতেও মহাসড়কে ভাঙচুর চালান ক্ষুব্দ স্বজনরা৷
এদিকে এই ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন৷ এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রূপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক, পুলিশের একজন প্রতিনিধি এবং কলকারখানা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি।