সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলীয় নেতা কর্মীদের প্রতি আহবান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে সব ধর্মের নাগরিকদের অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তিনি তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি শান্তি সম্মিীলন, শান্তি মিছিল এবং শান্তি সভা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। প্রত্যেকটি এলাকায় আমাদের নেতা-কর্মীদের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং শান্তি সম্মিলন, শান্তি মিছিল, শান্তি সভা করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কোন রকমের সংঘাত দেখা না দেয়। কারণ, এই মাটিতে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকলেই যেন ভালভাবে বাঁচতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ অপরাহ্নে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত ‘অফিস ভবন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবণ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
করোনার শিক্ষা ‘যতই সম্পদ হোক দুঃসময়ে তা কাজে লাগে না’, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, মানুষ মরে গেলে এই সম্পদ পড়ে থাকবে তা কোন কাজেই আসবেনা। কাজেই যত বেশি দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করতে পারবো সেটাই জাতির পিতার এবং ইসলামের শিক্ষা। আর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছে মানুষের সেবার জন্য, সে কথাও মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে।
তাঁর সরকার দেশের বেদে শ্রেণী, তৃতীয় লিঙ্গ এমনকি কুষ্ঠরোগীদের জন্যও ঘর-বাড়ি করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেভাবে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকেও মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখে তাঁদের সেবা করতে হবে।
জাতির পিতা ডাকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ কাঁধে অস্ত্র তুলে নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এই স্বাধীনতাকে কোনভাবে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবেনা।
তিনি বলেন, কুমিল্লার যে ঘটনাটি ঘটে গেছে সেটা সত্যই খুব দুঃখজনক। কারণ, মানব ধর্মকে সম্মান করাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সকলের রয়েছে তেমনি অন্যের ধর্মকেও কেউ হেয় করতে পারেনা। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয়না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। আর অন্য ধর্মকে হেয় করা হলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, কুমিল্লার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা সেটাই দেখবো। আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করেছে অন্যের ধর্মকে অসম্মান করতে গিয়ে। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার নিজের ধর্মের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। আর একটি কথা আইন কেউ হাতে তুলে নেবে না। কেউ যদি অপরাধ করে, সে যেই হোক সে অপরাধীদের বিচার হবে। আমাদের সরকার সে বিচার করবে।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি অনুষ্ঠানে কুমিল্লা প্রান্ত থেকে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লা প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু এই অনুষ্ঠানে নবনির্মিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবেনা। কাজেই আমাদের সকলেরই সেই কথা মেনে চলতে হবে এবং জানতে হবে, তাহলেই সঠিক শিক্ষা আমরা পাব। প্রত্যেকটি ধর্মই শান্তির বাণীর কথা বলে, সকলেই শান্তি চায়। কাজেই এই বাংলাদেশে আমরা একটা অসম্প্রদায়িক সমাজে বসবাস করি যেখানে সকলের ধর্মের সাথে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে এবং এই সম্প্রীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। কেননা যুগ যুগ ধরেই এ দেশে সকল ধর্মের মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করে আসছে।
শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, সেখানে কোন ধর্ম দেখে নয়, যারা রক্ত দিয়েছেন তাঁদের রক্তের সঙ্গে সকল ধর্ম একাকার হয়ে মিশে গেছে। আর এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল বর্ণের এবং সব শ্রেনী পেশার মানুষই একটা মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে চলবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করার জন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর প্রচেষ্টা নেয়া হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনা ঘটার পর পরই পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় যে ঘটনা ঘটেছে, ঘর-বাড়ি পুড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু টাঙ্গিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুকনো খাবার থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার বিতরণ, কাপড়-চোপড় এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং যাদের এ ধরনের ক্ষতি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ সবাইকেই আমরা ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেব। ইতোমধ্যে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
আওয়ামী লীগ এমন একটা সংগঠন যে সংগঠন জাতির পিতা করে দিয়ে গিয়েছেন, যে সংগঠন এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নতি হয়, মানুষের কল্যাণ হয়। অথচ ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা মানুষকে কিছু না দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কাজেই আমরা চাই সারা বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় আওয়ামী লীগের একটা অফিস হোক।
কুমিল্লা খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল উল্লেখ করে তিনি নদী ড্রেজিং এবং জলাধার সংস্কারসহ এর অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা সব ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা আমাদের অব্যাহত থাকবে। আর গ্রাম গুলোতে যারা বসবাস করেন তারা যেন শহরের সব ধরনের নগরিক সুবিধা পা তাঁর ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে।
কুমিল্লাকে বিভাগে রুপান্তরিত করার দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ফরিদপুর এবং এর আশপাশের জেলাগুলোকে নিয়ে ‘পদ্মা’ এবং কুমিল্লা ও তার আশ পাশের জেলা নিয়ে ’মেঘনা’ বিভাগ প্রতিষ্ঠার ও প্রস্তাব করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ’৭৫ এর পর সবচেয়ে বেশি নির্মম নির্যাতনের শিকার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেব উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যেখানেই মানুষের ওপর কোন নির্যাতন হয় আওয়ামী লীগ পাশে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থাকে। আর বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে ধ্বংস করা। তাদের অগ্নি সন্ত্রাসে কত মানুষ জীবন দিয়েছে, কত নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে।
তাঁর সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া আজ তৃণমূলের মানুষ পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন,‘ আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে তা দিয়েই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো’ সেটাতেই আমরা বিশ্বাস করি। কারো কাছে আমরা হাত পেতে চলবো না। কারণ, ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকেনা-সে শিক্ষাও জাতির পিতাই দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে দেশের যখন উন্নয়ন হচ্ছে একটা শ্রেণি আছে তারা কখনো এটা মানতে পারেনা। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে সম্মান নিয়ে চলবে এটা তাদের কাছে পছন্দনীয় নয়। আর বিএনপি-জামায়াতের কখনই এটা পছন্দ হবেনা, কারণ খালেদা জিয়ার অন্তরে সবসময়ই ছিল ‘পেয়ারে পাকিস্তান’।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কন্ঠে বলেন, বাংলাদেশ আজকে স্বাধীন দেশ। কাজেই বাংলাদেশের ক্ষতি ভবিষ্যতে আর কেউ করতে পারবেনা। আমরা কখনও আর কারো অধীনস্থ হবোনা। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো। সেই কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন এবং আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবে, দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেবে, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করবে। আর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো, যেটা জাতির পিতা চেয়েছিলেন। সুত্র- বাসস।